বাণিজ্য ঘাটতি ১৪৬৫ কোটি ডলার

বাণিজ্য ঘাটতি ১৪৬৫ কোটি ডলার

রফতানি আয় বাড়ছে। তবে তার চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয় কম। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। তবে এই ঘাটতি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম হলেও অর্থনীতির জন্য ‘স্বস্তিদায়ক’ নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জোগান দিতেই আমদানির করতে হচ্ছে। এতে করে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই তুলনায় রফতানি আয় বাড়েনি। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১১ মাস শেষে ইপিজেডসহ (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৭১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৫ হাজার ১৮৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে মে মাস শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে)। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেশি ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘটতি ছিল ১ হাজার ৭১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবা খাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৯৫৮ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৬৩৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবাখাতে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১৬ কোটি ডলার।

অর্থবছরের ১১ মাসে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে যে পরিমাণ ঘাটতি হয়েছে, তা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক (-) রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ ঋণাত্মক কিছুটা কমেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অর্থবছরের ১১ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫১৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৬০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত মানে হলো নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকা মানে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আমদানির চাপের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এখন বেড়ে ডলারের দাম হয়েছে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ২০৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ আর নিট বেড়েছে ৩৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।

এদিকে আলোচিত সময়ে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ৫২ শতাংশের উপরে কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

সর্বশেষ গত ৩ জুলাই হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ১৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

অর্থ বাণিজ্য