আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে এক যুগ পর ফাইনালে ব্রাজিল

আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে এক যুগ পর ফাইনালে ব্রাজিল

গত তিন কোপা আমেরিকার ব্যর্থতাপূর্ণ ফলাফলকে ভুলতে এবার ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছে ব্রাজিল। বিশেষ করে ২০১৬ সালের আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল তারা। এর আগে ২০১১ ও ২০১৫ সালের আসরে থামতে হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে।

তবে এবার আর কোনো ভুল করলো না তিতের দল। চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে ২০০৭ সালের পর আবারও ফাইনালে পৌঁছে গেছে ব্রাজিল। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেলেসাওরা। এবার তাদের ভাগ্যে রয়েছে কী?- তা বলে দেবে সময়।

বুধবার ভোরের গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচটিতে ব্রাজিলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস ও রবার্তো ফিরমিনো। দুজনই করেছেন একটি করে গোল এবং একে অপরের গোলে এসিস্ট।

দুঃস্বপ্নময় স্মৃতিজড়িত বেলো হরিজন্তে মাঠে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই দুর্দান্ত এক আক্রমণ সাজায় স্বাগতিকরা। তবে রবার্তো ফিরমিনোর সে প্রচেষ্টা রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। সেটি আবার ছিল অফসাইডও।

নবম মিনিটের মাথায় ফের আর্জেন্টাইন রক্ষণে হামলা চালায় ব্রাজিল। ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে রুখতে গিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ফাউল করে বসেন নিকলাস তালিয়াফিকো। ফলে ম্যাচের দশ মিনিট হওয়ার আগেই প্রথম হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।

তবু গোলের প্রথম সুযোগটা তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনাই। ফাঁকায় থাকা লিওনার্দো পারেদেস ১২ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক শট নেন ব্রাজিলের গোলবারের উদ্দেশ্যে। যা পরাস্ত করে গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকেও। কিন্তু তা একটুর জন্য চলে যায় বারের ওপর দিয়ে।

মিনিটদুয়েক বাদে নিজেদের রক্ষণভাগে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসিকে ফেলে দেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো। যেটিকে রেফারি ফাউল না দিলেও দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এদিকে ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে মাত্র ১৯ মিনিটেই প্রথম গোল করে ফেলে ব্রাজিল। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার দানি আলভেসের দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ের ফায়দা নেয় স্বাগতিকরা।

দলের অধিনায়ক দানি দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল সামনে বাড়ান রবার্তো ফিরমিনোর উদ্দেশ্যে। যিনি বল রিসিভ না করে সরাসরি নিচু পাস দেন ডি-বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো গ্যাব্রিয়েল হেসুসের উদ্দেশ্যে। সুযোগসন্ধানী হেসুস কোনো ভুল করেননি গোলের সহজতম এ সুযোগটি কাজে লাগাতে। তার আলতো পায়ের টোকায় ১৯ মিনিটেই লিড নিয়ে ফেলে ব্রাজিল।

আর্জেন্টিনার সামনে এ গোল শোধ করার সবচেয়ে ভালো সুযোগটি আসে ম্যাচের ৩০তম মিনিটে। বাম পাশ থেকে লিওনেল মেসির ফ্রি-কিকে সবার চেয়ে ওপরে লাফিয়ে মাপা হেড করেন সার্জিও আগুয়েরো। কিন্তু সেটি গিয়ে আঘাত হানে ক্রসবারে। ফলে গোল পাওয়া হয়নি আলবিসেলেস্তেদের।

প্রথমার্ধের বাকি সময়টা কাটে দুই দলের বিচ্ছিন্ন কিছু আক্রমণে। এর মধ্যে ৪০ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার মার্কস আকুনা এবং ব্রাজিলের অধিনায়ক দানি আলভেস। এছাড়া কোনো গোল না হওয়ায় ১ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তরুণ ফরোয়ার্ড এভারটন সোয়ারেসকে উঠিয়ে উইলিয়ানকে মাঠে নামান ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে। প্রথমার্ধের মতো এবারও শুরুতেই আক্রমণে ওঠে ব্রাজিল। তবে ফিলিপ্পে কৌতিনহোর দুর্বল প্রচেষ্টা থামিয়ে দিতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের।

তবে মিনিটতিনেক বাদে দুই মিনিটের ব্যবধানে ব্রাজিলের রক্ষণে দুইবার হানা দেয় আর্জেন্টিনা। ৫০ মিনিটের মাথায় লাউতারো মার্টিনেজের বাম পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন।

দুই মিনিট পর মেসি, আগুয়েরো ও মার্টিনেজের সম্মিলিত আক্রমণটিকে হতাশায় রূপ দেন রদ্রিগো ডি পল। ডি-বক্সের কোনা থেকে বল মেরে দেন বারের ওপর দিয়ে। ফলে সে যাত্রায়ও কোনো বিপদ হয়নি ব্রাজিলের।

এক গোলের লিডে থাকলেও ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টায় কমতি রাখেনি ব্রাজিলও। ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় হেসুসের নৈপুণ্যে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। তবে সে বলটি পেয়ে বারের ওপর দিয়ে মারেন বার্সেলোনার তারকা খেলোয়াড় ফিলিপ্পে কৌতিনহো।

এ আক্রমণ সাজানোর সময় হেসুসকে অযাচিত ফাউল করায় ম্যাচে আর্জেন্টিনার পক্ষে তৃতীয় হলুদ কার্ড দেখেন হুলেন ফয়েথ। ৫৮ মিনিটের মাথায় চতুর্থ হলুদ কার্ডটি দেখেন লাউতারো মার্টিনেজ।

তার আগে ৫৭ মিনিটের মাথায় আবারও বারে লেগে গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। লাউতারো মার্টিনেজের শট ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে ফিরে এলে বাম পায়ে শট নেন মেসি। কিন্তু সাইড পোস্টে লেগে ফিরে এসে সেটি। ফিরতি বল গোলমুখে বাড়ালেও, জায়গামতো ছিলেন না আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড়। ফলে সে যাত্রায়ও ম্যাচে ফেরা হয়নি আলবিসেলেস্তেদের।

এ আক্রমণের পরপরই জোড়া পরিবর্তন করেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। মার্কস আকুনার বদলে তিনি মাঠে নামান অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে। রদ্রিগো ডি পলের বদলে আসেন জিওভানি লো সেলসো। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কোনো।

উল্টো ৭১ মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ব্রাজিল। এবার গোল করেন রবার্তো ফিরমিনো, তাকে বলের জোগান দেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। মাঝমাঠ থেকে একার নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে বোকা বানিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান হেসুস।

সুযোগ বুঝে পাস বাড়িয়ে দেন ডি-বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো ফিরমিনোর উদ্দেশ্যে। ফাঁকা জালে বল প্রবেশ করাতে কোনো সমস্যাই হয়নি লিভারপুল তারকা ফিরমিনোর। দুই গোলের লিড নিয়ে ম্যাচের ২০ মিনিট বাকি থাকতেই জয়োল্লাস শুরু হয়ে যায় স্বাগতিকদের গ্যালারিতে।

গোল হজম করলেও সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনেও। ডি-বক্সের কাছে দানি আলভেস হ্যান্ডবল করলে গোলের ২০ গজ দূরে ফ্রি-কিক পায় তারা। কিন্তু লিওনেল মেসির শট আটকে যায় রক্ষণ দেয়ালে। সেটি থেকে কর্নার পেলেও গোল করা হয়নি আর্জেন্টিনার।

ম্যাচের ৮০ মিনিটের মাথায় দুই গোলেরই নায়ক হেসুসকে উঠিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে। তার বদলে আসেন অ্যালান মারকুয়েস লোরেইরা। যিনি দুই মিনিটের মধ্যেই দেখেন ব্রাজিলের পক্ষে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটি।

শেষবারের মতো গোলের চেষ্টায় ৮৫ মিনিটের মাথায় নিকলাস তালিয়াফিকোকে উঠিয়ে পাওলো দিবালাকে মাঠে নামান আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয়নি কিছুই। গোল শোধ করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ২-০ গোলের জয় নিয়েই ফাইনালে পৌঁছে গেছে ব্রাজিল।

খেলাধূলা