বর্তমান সময়ে দেশগুলো আধুনিক সমরাস্ত্রে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেই প্রতিযোগিতায় বাকি দেশগুলোর তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে গেল চীন। দেশটি এমন এক যুদ্ধযানের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যা বিশ্বে আর কোনো দেশের কাছে নেই।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এই আলোচিত ও অনন্য যুদ্ধযানটি হলো একটি উভচর ড্রোন বোট। ড্রোন বোটটির নাম রাখা হয়েছে মেরিন লিজার্ড। চীনা সামরিক বিশ্লেষকদের দাবি অনুযায়ী, এই ড্রোন বোটকে যুদ্ধের ময়দানে আক্রমণ করার পাশাপাশি আকাশে উড়ন্ত ড্রোন ও অন্যান্য ড্রোন শিপের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রিমুখী শক্তি হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
চায়না শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের (সিএসআইসি) অধীনে উচাং শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ এই ড্রোন বোটটি তৈরি করেছে। চীনা গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ৮ এপ্রিল এই যুদ্ধযানটির সফল পরীক্ষা চালানো হয়।
চীনের একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড্রোন বোটটি সর্বোচ্চ ১২০০ কিলোমিটার দূরত্বে কাজ করতে পারবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এটিকে। জাহাজের আদলে তৈরি ১২ মিটার দীর্ঘ এই ড্রোন বোটটি ডিজেলচালিত হাইড্রোজেট দ্বারা পরিচালিত হবে। অবস্থান গোপন রেখে নিঃশব্দে এটি সর্বোচ্চ ৫০ নট গতিবেগে ছুটতে পারবে।
জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে এলে মধ্যভাগে লুকোনো চারটি ট্রাক বের করে আনতে পারবে এই ড্রোন বোট। এতে করে এটি ময়দানে যুদ্ধের জন্য আরও উপযোগী হয়ে উঠবে। ডাঙায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে এটি। সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রোন বোটের গতিবেগ আরও বাড়ানো সম্ভব।
দেশটির একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মেরিন লিজার্ডে ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সিস্টেম ছাড়াও থাকছে একটি রাডার সিস্টেম। সঙ্গে দুটি মেশিনগান ও একটি ভার্টিক্যাল লঞ্চিং সিস্টেম থাকছে, যা অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল মোকাবিলা করতে পারবে। ড্রোন বোটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেসে থাকতে পারবে, বাধা এড়িয়ে চলতে পারবে এবং নিজের গতিপথ সম্পর্কে নিজেই পরিকল্পনা করতে পারবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্র থেকে ডাঙায় আক্রমণ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। মেরিন লিজার্ড এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করতে সক্ষম। দৃষ্টিসীমার অগোচরে থেকে শত্রুপক্ষের অবস্থান নির্ণয় করতেও পারবে এই ড্রোন বোট।
সমুদ্রতীরবর্তী উপকূল রক্ষার জন্যও দারুণ একটি বিকল্প হতে পারে এই ড্রোন বোট। গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একবার নির্দেশ পেলে যুদ্ধে জড়ানোর আগে সর্বোচ্চ আট মাস পর্যন্ত যেকোনো দ্বীপে লুকিয়ে থাকতে পারবে যুদ্ধযানটি।
চীন বলছে, শুধু নিজেদের ব্যবহারের জন্য নয়, রপ্তানি উপযোগী করেই নতুন এই যুদ্ধযান তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছে চীন। কেবল সামরিক খাতেই দেশটির বার্ষিক বরাদ্দ ১৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।