একক সংখ্যায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে সরকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে বহুল আলোচিত ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলী ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটি সভাপতি আ স ম ফিরোজ। বৈঠকে কমিটি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত সরকার ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিনের দাবি অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের সুদের হার একক অংকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মালিকরা বেশকিছু সুবিধাও নিয়েছেন। এরমধ্যে ব্যাংক পরিচালকদেও মেয়াদ ও সংখ্যা দুটোই বাড়িয়ে নিয়েছেন। ব্যাংকের করপোরেট কর আগের চেয়ে আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা; ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। পরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেনা দেন।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, বন্ধ ও অচল মিল করখানা সচল করার বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা এবং অনাদায়ী ও শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার উপর আলোচনাকালে জানানো হয়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নীতিমালা জারি করা হয়েছে। উক্ত নীতিমালার ফলে অনেক রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, বন্ধ ও অচল মিল কারখানা সুদ মওকুফ সুবিধা পেয়েছে। ফলে ওই সকল প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট অনাদায়ী ও শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় সহজতর হয়েছে। এতে ব্যাংকসমূহ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) খেলাপি গ্রাহকের তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করতে পারছে। ফলে এক ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক অন্য ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে খেলাপীর হার কমছে।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পের ২৭৯টি ও নন টেক্সটাইল শিল্প খাতের ৪১১টি প্রতিষ্ঠান রুগ্ন শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ৪২৬টি রুগ্ন শিল্পের (নন-টেক্সটাইল) জন্য সুদ ভর্তুকিসহ নমনীয় পরিশোধসূচিতে ঋণ হিসাব অবসায়নে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই প্যাকেজের আওতায় ইতোমধ্যে অধিকাংশ ঋণ হিসাব নিস্পত্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বলেছিল, সরকারি টাকার ৫০ ভাগ আমানত জমা পেলে তারা একক ডিজিটে সুদ হার বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তারা সেই সুবিধা নিলেও এখনও সুদের হার একক সংখ্যায় আনেনি। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলে দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদের হার একক সংখ্যায় আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংক ঋণে উচ্চ হারে সুদের কারণে ঋণরখলাপি হয়। ব্যাংকগুলো চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেই সুদের হার মেটানো অসম্ভব হয়ে যায়। কাজেই আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে সব ব্যাংককে নয় শতাংশ হারে সুদ নির্ধারণ করতে হবে।