বাংলাদেশ ব্যাংকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া নিয়োগ!

বাংলাদেশ ব্যাংকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া নিয়োগ!

একদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া চলছে লোকবল নিয়োগ। অন্যদিকে নিয়োগের পর ভেরিফিকেশনের নেতিবাচক প্রতিবেদন এলে করা হচ্ছে চাকরিচ্যুত। দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ব্যাংকে চলছে এই কাণ্ড।

গত বছরের ৩১ আগস্ট ও ১০ সেপ্টেম্বরে দুই দফায় পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া ৪০৬ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক পদে ১৮৩ জন এবং ক্যাশ অফিসার পদে ২২৩ জন। অফিসার পদে আরো ২৫০ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আজ তাঁদের যোগদানের কথা রয়েছে। এ ছাড়া সহকারী পরিচালক পদে আরো ২০০ জনকে নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে। এঁদেরও পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়নি।

এদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া প্রায় ছয় মাস আগে নিয়োগ পাওয়া ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেমকে গত ২৭ মার্চ চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। নিয়োগের পর তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন আসায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ তালিকায় রয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এঁদের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনও নেতিবাচক। দ্রুতই এঁদের চাকরিচ্যুত করা হবে। জানা গেছে, চাকরিচ্যুত আবুল কাশেম বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ওই সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনে তাঁর চাকরি আটকে যায়। শেরপুরে এসআই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার সময় তিনি আটক হন এবং রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জেলও খাটেন। তাঁকেই পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩ ভেঙে পর পর বিপুলসংখ্যক এই নিয়োগের ফলে (যা এখনো চলমান) বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। তারা বলছে, রিজার্ভ চুরির পর যেখানে সব বিষয়ে আরো বেশি সতর্ক হওয়ার কথা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিজস্ব নিয়ম ও কেপিআই নীতিমালা ভেঙে একের পর এক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাকে এমন সব বিভাগে পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে যেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর।

বাংলাদেশ ব্যাংক কেপিআইয়ের ১(ক) শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অভিভাবক। এখানে সংরক্ষণ করা হয় অনেক সংবেদনশীল তথ্য। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকই মানছে না কেপিআইয়ের নিয়ম। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের প্রত্যেকের নামে নিজস্ব ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড থাকে। ভেরিফিকেশন ছাড়া নিয়োগ পাওয়ায় সেটির অপব্যবহার হচ্ছে কি না, তা ভাবনার বিষয়। আর ভেরিফিকেশন শেষ করতে লেগে যায় পাঁচ থেকে ছয় মাস সময়।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বাধিক স্পর্শকাতর বিভাগ হলো ক্যাশ বিভাগ। এই বিভাগে কর্মরতরা ব্যাংকের ভল্টের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া ক্যাশ কর্মকর্তা পদে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁরা ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগেই কাজ করছেন। চাকরিচ্যুত ওই কর্মকর্তাও ক্যাশ বিভাগে কাজ করছিলেন। আর সহকারী পরিচালক পদে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁরাও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে সব কিছুই পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর করা হতো। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশনে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই নিয়োগ-উত্তর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগ পাওয়াদের শর্তই দেওয়া হয়, খারাপ রিপোর্ট পাওয়া গেলে নিয়োগ বাতিল এবং চাকরিকালীন সব সুবিধা ফেরত নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রিমিনাল বা যাদের বিরুদ্ধে কেস পেন্ডিং আছে এমন কাউকে তো আর বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ দেবে না। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য হলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার। এখন একটা পাসপোর্ট করতেও পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন হওয়া উচিত।’

জানা যায়, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার নিয়ম রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রণীত কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩-এর ৫.৩.১ ধারা অনুযায়ী, বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ে নিয়োজিত সব সামরিক ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাথমিক নিরাপত্তা প্রতিপালন করতে হবে। এ ছাড়া ডিজিএফআই, এনএসআই ও এসবির মাধ্যমে ছয় মাস অন্তর তাঁদের নিরাপত্তা ভেটিং করাতে হবে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর