প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত।
এই মামলায় জামিন পাওয়া একমাত্র আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের জামিন বৃদ্ধির আবেদন খারিজ করে মহানগর দ্রুত বিচার আদালত তাকেও কারাগারে পাঠাতে বলেছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে চার ‘পলাতক’ আসামির বিরুদ্ধে।
মহানগর দ্রুত বিচার হাকিম এরফান উল্লাহ সোমবার এই আদেশ দেন। আদেশের পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শ্লোগান নিয়ে এবং হৈ চৈ করে ব্যাপক হট্টগোলের সৃষ্টি করেন।
যে চার জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মো. মকবুল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এবং ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির।
এদের মধ্যে নাসির অন্য একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
এম ইলিয়াস আলীকে ‘গুমের’ প্রতিবাদে গত ২৯ এপ্রিল সারা দেশে হরতালের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি বাসে আগুন দেয় হরতালকারীরা। ২৯ এপ্রিল রাতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ৪৪ নেতাকর্মীর নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
এজাহারে থাকা একজনের নাম বাদ দিয়ে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত করে ১০ মে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নুরুল আমীন।
আসামিদের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের উপস্থিতিতে এই অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির আবেদন করলে হাকিম এরফান উল্লাহ সোমবার তা খারিজ করে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলুসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৩ শীর্ষ নেতার জামিন আবেদন নাকচ করে গত ১৬ মে তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত।
জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংসদ সদস্য মাহবুব উদ্দিন খোকন সোমবার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করলে তা খারিজ করে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খোকন সাংবাদিকদের বলেন, “জিয়া পরিবারের মামলা পরিচালনাসহ ইলিয়াস আলীকে ‘গুমের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাকে এ মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হচ্ছে। জামিনের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বিচারিক আদালত মানছে না।”
খোকনের জামিন নাকচ হওয়ার পরপরই বিএনপি সমর্থক এক আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে গালাগাল দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিচারক এজলাস ছেড়ে নেমে গেলেও চেচামেচি চলতে থাকে।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের কয়েকজন এ সময় আদালতের দরজা ও আসনে লাথি মারতে থাকেন এবং শ্লোগান দেন- ‘আওয়ামী লীগের দালালরা হুঁশিয়ার, সাবধান’।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতনকে মামলা দায়েরের রাতেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।