ক্যান্সার চিকিৎসায় আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন ভারতের বেঙ্গালুরুর একদল গবেষক। নতুন একটি স্টেম সেল প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন তারা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আস্রিজ’।
গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ব্লাড’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়। গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন বেঙ্গালুরুর জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ (জেএনসিএএসআর)-এর গবেষক সালোনি সিন্হা।
রক্তে এক ধরনের রোগ হলে পূর্ণাঙ্গ রক্তকোষের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। সেই রোগের নাম ‘মায়েলো-প্রলিফারেটিভ ডিসিস’। আসলে ওই রোগের ফলে রক্তকোষগুলোর ‘বংশবৃদ্ধি’ (মিউটেশন) হয় অস্বাভাবিক দ্রুত হারে। দু’টি কোষ থেকে চারটি, চারটি কোষ থেকে ১৬টি, কোষের সংখ্যা এভাবে বেড়ে যায়। অনেকটা যেন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের মতো, যাদের অস্বাভাবিক দ্রুত হারে সংখ্যাবৃদ্ধির কারণ মিউটেশনই।
শুধু অস্বাভাবিক দ্রুত হারে রক্তকোষের সংখ্যাবৃদ্ধি হলে তা যতটা উদ্বেগের হততো, তার চেয়েও এই ঘটনা বেশি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।
কারণ, ওই পূর্ণাঙ্গ রক্তকোষগুলোই ক্যান্সার কোষ হয়ে ওঠে। আর সেটাও হয় অস্বাভাবিক দ্রুত হারে। সেই কোষগুলো রক্তে থাকে বলে রক্তস্রোতের সঙ্গে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তেও মোটেই সময় নেয় না। গবেষকরা দেখেছেন, রক্তকোষের এই অস্বাভাবিক দ্রুত হারে সংখ্যাবৃদ্ধির পেছনেও কলকাঠি নাড়ে একটি প্রোটিন। তার নাম- ‘পি-৫৩’।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীরের যে কোনো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যে কোনো ধরনের দুর্বলতা, যে কোনো রকমের রোগে ‘নারদ’-এর ভূমিকাটা পালন করে কোনো না কোনো প্রোটিন। আমাদের শরীরে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার প্রোটিনের হদিস মিলেছে। বিভিন্ন সময় সেই প্রোটিনগুলোর বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম আমরা জানতে পেরেছি।
তবে কোনো প্রোটিন যে শুধুই কোনো একটি কাজের দায়িত্ব নিয়ে বসে রয়েছে, তা কিন্তু নয়। একই প্রোটিন একাধিক কাজ করে। নানা ভাবে কাজ করে। যে প্রোটিন কোনো ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে উপকারী, সেই প্রোটিনই অন্য কোনো ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে আমাদের পক্ষে বিপজ্জনক।
গবেষকরা কাজ করেছেন ইঁদুরের ওপর। তারা যে প্রোটিনটি (আস্রিজ) আবিষ্কার করেছেন, দেখা গেছে, তা ব্লাড ক্যান্সার সারাতে কাজে লাগছে। আবার তারা এও দেখেছেন, পি-৫৩ প্রোটিনটি রক্তস্রোতে অস্বাভাবিক দ্রুত হারে রক্তকোষগুলির সংখ্যাবৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।
অন্যতম গবেষক মনীষা এস ইনামদার জানিয়েছেন, রক্ত ছাড়া আর যে সব ধরনের ক্যানসার হয়, তার ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই আসল কলকাঠিটা নাড়ে ওই পি-৫৩ প্রোটিন। কারণ, ক্যানসার মানেই অস্বাভাবিক দ্রুত হারে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি। এটাও দেখা গিয়েছে, ব্লাড ক্যানসারের ১১ শতাংশ ক্ষেত্রে নারদের ভূমিকা নেয় পি-৫৩ প্রোটিন।
শুধু তাই নয়। মনীষার কথায়, আমরা দেখেছি, রক্তস্রোতে যদি পি-৫৩ প্রোটিন কোষগুলির অস্বাভাবিক দ্রুত হারে বংশবৃদ্ধি বা মিউটেশনে সাহায্য না-ও করে, তা হলেও রক্তে আস্রিজ প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকলে ক্যানসার হয়। ফলে, পূর্ণাঙ্গ কোষের অস্বাভাবিক দ্রুত হারে সংখ্যাবৃদ্ধি রোখা যায় না। সে ক্ষেত্রে অনিবার্য হয়ে ওঠে ক্যান্সার।