রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার না করার আরজি জানিয়ে লেখা এক চিঠি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে লেখা ওই চিঠি আসল না ভুয়া, সন্দেহ তাকে ঘিরেই। কারণ রাষ্ট্রপতি ভবনের সূত্র অনুযায়ী ওই চিঠি আদৌ রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছায়নি।
সংবাদমাধ্যমগুলোয় চিঠির বক্তব্য প্রচারিত হয় আজ শুক্রবার। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে ওই চিঠির প্রতিলিপি। চিঠির নির্যাস—রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের সেনাবাহিনীকে যেন ব্যবহার না করা হয়। চিঠি অনুযায়ী, দেশের ১৫৬ জন সাবেক সেনানী ও বাহিনীর প্রধানেরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে তিনি যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে তাঁরা বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান, বীর জওয়ানদের ছবি, তাঁদের পোশাক, প্রতীক, বীরত্ব ও শৌর্য যেভাবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব টেনে আনা হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্দেশ দিতে তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার।
চিঠিটি লেখা হয়েছে ১১ এপ্রিল। সই রয়েছে ১৫৬ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর রায় চৌধুরী, দীপক কাপুর, এস এফ রডরিগস, সাবেক নৌপ্রধান লক্ষ্মীনারায়ণ রামদাস, বিষ্ণু ভগত, বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এন সি সুরি প্রমুখ। ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অরাজনৈতিক এবং অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের উল্লেখ করে সাবেক সেনানীরা বলেছেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা সীমান্তপারের সামরিক অভিযানের কৃতিত্ব নিচ্ছেন, সংবিধানের প্রতি অনুগত ভারতের সেনাবাহিনীকে ‘মোদিজি কি সেনা’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারমঞ্চ সাজানো হচ্ছে সেনানীদের ছবি দিয়ে। সেনানীদের পোশাক পরে নেতারা প্রচার চালাচ্ছেন। বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে প্রচারের সময়।
সাবেক সেনানীরা লিখেছেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার যত এগোবে, এই প্রবণতা ততই বাড়বে। বাহিনীর ধর্মনিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক চরিত্র রক্ষায় সাবেক সেনানীরা তাই রাষ্ট্রপতিকে কার্যকর ভূমিকা নিতে অনুরোধ করেছেন। বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যেন সব রাজনৈতিক দলকে এই আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
সাবেক সেনানীদের লেখা এই চিঠি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে অন্যভাবেও। সাবেক সেনাপ্রধান এস এফ রডরিগস সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ওই চিঠিতে তিনি সই করেননি। চিঠি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেনও না। বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এন সি সুরিও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই ধরনের কোনো চিঠিতে তিনি সই করেননি।