জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, শিক্ষার্থী নুসরাতের প্রতিবাদ সবার জন্য শিক্ষণীয়। নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন বাড়ছে। মানুষ বিচার পাচ্ছে না। এটা সমাজের জন্য খারাপ বার্তা দিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফেনীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দেখতে এসে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা লক্ষ করছি নারী, শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় মানুষ শঙ্কার মধ্যে বসবাস করছে। আমরা জানি না কে কখন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে যাবে। এগুলোর একটি পরিসমাপ্তি ঘটা উচিত। তবে দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশে অনেক আইন থাকলেও তার প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। এ কারণে মানুষ বিচার পাচ্ছে না। ফলে আমার মনে হচ্ছে, অপরাধীদের সাহস দিন দিন আরো বেড়ে যাচ্ছে।’
যৌন হয়রানির জন্য একটা আইন করা উচিত মনে করে তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি করছি যৌন হয়রানি বন্ধে একটা আইন করার। আদালত থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যৌন হয়রানি বন্ধে একটা কঠিন আইন করতে হবে। সেই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে আমরা সেই জিনিসটি এখনো করতে পারিনি।’
আইন করে কী হবে—অনেকটা আক্ষেপের সুরে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক এবং হতাশাজনক লাগে যে নুসরাতের অকাল মৃত্যুর জন্য যাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, তাকে যখন রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার চেহারায় আমি কোনো অনুশোচনা বোধ দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়নি সে ভীতসন্ত্রস্ত। তার মানে এই ঘটনায় অপরাধীর মনের ভেতর আমরা এখনো কোনো দাগ কাটাতে পারিনি। অপরাধী ভীত হলে অপরাধ ঘটানোর আগে চিন্তা করত।’
নুসরাত ঘটনার প্রতিবাদ করে গেছে জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নুসরাত অন্যায়ের কাছে, কারো যৌন লালসার কাছে নত হয়নি। নুসরাত প্রতিবাদ করে গেছে। অনেকেই নতি স্বীকার করে, সায় দেয়। কিন্তু নুসরাত সেটা করেনি। নুসরাত একজন প্রতিবাদী মানুষ।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মনে করেন, “আজকের দিনটি ‘নুসরাত ডে’ হিসেবে আমাদের স্মরণ করা উচিত।”
নুসরাতের বিষয়ে পুলিশের আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রাথমিকভাবে নুসরাতের যে মানবিক মর্যাদাহানি করা হয়েছে, তারও বিচার হওয়া উচিত। থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু প্রত্যাহার নয়, তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’