পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূতে ভয় পান কি না, তা জানা যায়নি। তবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা ও কলকাতার বাইরে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ মুক্তির পরদিন হঠাৎ করেই সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। দর্শকেরা সিনেমা হলে গিয়ে দেখল, ভবিষ্যতের ভূত উধাও।
এই ঘটনায় রাজ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, কাহিনি কী?
‘নীরস’ মমতা সাফ বলে দেন, ‘এ নিয়ে আমি উত্তর দেব না। আমায় প্রশ্ন করবেন না।’
এই বিষয়ে তাহলে কাকে প্রশ্ন করা যাবে?
প্রযোজক কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন হলমালিকের কাছে সিনেমাটি নামিয়ে ফেলার কারণ জানতে চেয়ে লিখিত নোটিশ পাঠান। অনেক চাপাচাপির পর হলমালিকেরা ‘ওপর মহলের চাপের কথা’ বলেন।
উত্তর ওটুকুই। এই ‘ওপর মহলটা’ কে, সে বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি। তবে কারও বুঝতেও বাকি থাকে না।
গোটা বিষয়টি নিয়ে কলাকুশলীদের সংগঠন ইম্পা এবং ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ছবির প্রযোজক ও পরিচালক। শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা না হওয়ায় ঘটনা গড়ায় আদালতে।
১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করা যাবে না বলে মত দেন। এতেও কাজ না হলে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ৫ এপ্রিল থেকে ছবিটির প্রদর্শনী ফের শুরু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার অলিখিতভাবে এই ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকার মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিপূরণ ২০ লাখ টাকা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী আছে এই ছবিতে, যে তা ‘রাজনৈতিক’ নির্দেশে বন্ধ করতে হলো?
আগে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবতী’ ছবির প্রিমিয়ারের ব্যাপারে একের পর এক রাজ্য মুখের ওপর ‘না’ করে দিচ্ছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বানসালিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কলকাতায় এসে ছবির প্রিমিয়ার করার জন্য। অথচ, সেই একই মমতা ভবিষ্যতের ভূতের ক্ষেত্রে বদলে গেলেন। কিন্তু কেন?
পরিচালক অনীক দত্তের ছবিটির সারসংক্ষেপ হলো—রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরোধিতা করলে ভূতের মতোই কোণঠাসা হতে হবে। একই সঙ্গে ছবিতে দেখানো হয়েছে, ভিলেনের মাথায় অক্সিজেন কম যায়। ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘চড়াম চড়াম’ জাতীয় শব্দ। ‘হোক কলরব’-এর মতো আন্দোলনও উঠে এসেছে ছবিতে। নির্বাচনের আগে এতেই মমতা ভয় পেয়েছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। মমতা হয়তো মনে করেছেন, এই ছবিতে পরিচালক বুঝি তাঁর কথাই বলেছেন। অবস্থাটা এমন, ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না।’
ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ লাখ টাকা মমতার জন্য এমন বড় কোনো অঙ্ক নয়। কিন্তু সিনেমা বন্ধের জন্য তাঁকে যে মাশুল গুনতে হচ্ছে, এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তা ছাড়া একে চলচ্চিত্রের জন্য ভালো খবরই বলতে হয়। ভবিষ্যতে যদি কেউ চলচ্চিত্রশিল্পের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কথা মাথায় আনেন, তাহলে তাঁদের জন্য এটা একটা সতর্কবার্তা।
পরিচালক অনীক দত্তকে নাকি অনেকেই এই ধরনের ছবি বানানো বন্ধ করতে উপদেশ দিয়েছেন। তা না হলে তাঁকে নাকি ভাতে মরতে হবে! অনীক তাতে থেমে যাননি। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভাত না পেলে রুটি খেয়ে থাকবেন তিনি।
ভারতে আজ থেকে শুরু হয়েছে লোকসভার ভোট গ্রহণ। এখন কলকাতাবাসীই সিদ্ধান্ত নিক, তাঁরা ভবিষ্যতের ভূত দেখে ভোট দেবেন, নাকি ভোট দিয়ে এসে এই সিনেমা দেখবেন।