ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মামলা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, এ মামলায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখবেন হাইকোর্ট। সাগর-রুনি, তনুসহ অন্যান্য মামলার মতো কোনোভাবেই যেন রাফির মামলা হারিয়ে না যায়, তা হাইকোর্টের নজরে থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন। প্রথম আলোসহ পাঁচটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো তুলে ধরে আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এ আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক।
৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দিন রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত জাহান রাফি মারা যান।
এর আগে গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। এ মামলা তুলে নেওয়া এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাত যা অভিযোগ করেছিলেন তা সব মিথ্যা—বলার জন্য চাপ দিতে থাকে দুর্বৃত্তরা। এতে নুসরাত ও তাঁর পরিবার রাজি হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগে নুসরাত চিকিৎসকদের কাছেও জবানবন্দি দেন।
সৈয়দ সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচটি পত্রিকায় নুসরাতকে নিয়ে প্রকাশিত খবর আদালতের সামনে উপস্থাপন করি। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ঘটনার সঙ্গে ধর্মীয় সেনসেটিভিটির বিষয় জড়িত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা আছে। তাই আমি এ ঘটনায় হাইকোর্টের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করি। আদালত আমার আবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। ’
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নুসরাতের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেস সচিব আরও বলেন, নুসরাতের মর্মান্তিক মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনা নুসরাতের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, ‘আদালত বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে এ ঘটনায় হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি পিবিআইকে ট্রান্সফার করা হয়েছে তদন্তের জন্য। তাই আপাতত হাইকোর্ট আলাদা করে কোনো নির্দেশনা দেননি। আদালত আমাকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কোনো গাফিলতি হলে হাইকোর্টের দরজা সব সময় খোলা থাকবে এবং হাইকোর্ট তাতে হস্তক্ষেপ করবেন বলে জানানো হয়েছে।’