গান্ধী পরিবারে প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে আনার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাহুল গান্ধী। সেই সঙ্গে ‘অপরিপক্ব যুবরাজ’ হিসেবে নিজের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, তাও ভাঙতে মরিয়া ৪৮ বছর বয়সী এই কংগ্রেস নেতা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোই রাহুলের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
রাহুলের জন্ম ১৯৭০ সালে। ওই সময় তাঁর দাদি ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ইন্দিরা হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর মেয়ে। ১৯৪৮ সালে দেহরক্ষীর গুলিতে মৃত্যু হয় ইন্দিরার। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নেন রাহুলের বাবা রাজীব গান্ধী। ১৯৯১ সালে এক তামিল আত্মঘাতী হামলাকারীর বোমায় মৃত্যু হয় রাজীব গান্ধীর। ওই সময় ২০ বছর বয়স রাহুলের।
একসময় হাভার্ডের ছাত্র ছিলেন রাহুল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর কারণে সেখানে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে তিনি ভর্তি হন ফ্লোরিডার রোলিনস কলেজে। ক্যামব্রিজ থেকে ১৯৯৪ সালে অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এ ছাড়া লন্ডনে কিছুদিন একটি ‘ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্সি’ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি।
রাহুলের ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত মা সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের দায়িত্ব নেন ১৯৯৮ সালে। তাঁর হাত থেকেই ২০১৭ সালে দলের হাল আসে রাহুলের হাতে।
এর ১০ বছর আগে ২০০৭ সালে ফাঁস হওয়া এক তারবার্তায় সামনে আসে রাহুল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন। সেখানে মার্কিন কূটনীতিকরা তাঁকে মোটা দাগে একজন ‘অপরিপক্ব রাজনীতিবিদ’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। যদিও দুই বছরের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন অনেকটা বদলে যায়। ২০০৯ সালের এক তারবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক পিটার বারলেই বলেন, রাহুল দিনে দিনে দক্ষ রাজনীবিদ হয়ে উঠছেন এবং তিনি ভালো করেই জানেন যে কিভাবে নিজের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হয়। এ ছাড়া তিনি কংগ্রেসের মৌলিক বিষয়গুলোও রপ্ত করছেন।
২০১৪ সালে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কাছে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের পর দল পুনর্গঠনে কাজ করেন রাহুল। গত বছর পার্লামেন্টে এক ভাষণ দিয়ে সবার প্রশংসা কুড়ান তিনি। এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে ধরে সবাইকে অবাক করে দেন গান্ধী পরিবারের এই উত্তরসূরি।
মোদির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী দর্শন এড়িয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছেও পৌঁছাতে পেরেছেন রাহুল গান্ধী। নারী ভোটারদের মন জয় করতে পার্লামেন্টে তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
কাজের ‘পুরস্কারও’ এরই মধ্যে পেয়েছেন রাহুল। গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয় পায় কংগ্রেস।
বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে পরিণত রাহুল। গত কয়েকটি নির্বাচনী সভায় মোদি সরকারের বিভিন্ন নীতির গঠনমূলক সমালোচনা করেন তিনি। কিন্তু বক্তব্য দিয়ে খবরের শিরোনাম হওয়ার ক্ষেত্রে এখনো মোদির চেয়ে পিছিয়ে আছেন সোনিয়াপুত্র। সূত্র : এএফপি।