বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ আয়োজনে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করতে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রাচীন অনুষঙ্গ আলপনা চিত্রের ঐতিহ্যকে বড় পরিসরে তুলে ধরতেই দেশের বৃহত্তম আলপনা উৎসব ‘বার্জার আলপনায় বৈশাখ ১৪২৬’ আয়োজন হতে যাচ্ছে। সপ্তমবারের মতো এ আয়োজন হতে যাওয়া এই অনুষ্ঠান হচ্ছে এশিয়াটিক এক্সপেরিএন্সিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড (ইএক্সপি) ও বার্জারের সহায়তায়। এবার ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় এ উৎসবের আয়োজন করা হবে।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ও এশিয়াটিক ইএক্সপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হোটেল লা ভিঞ্চিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বছর আয়োজনের শিরোনাম ‘বার্জার-আলপনায় বৈশাখ ১৪২৬’। সংবাদ সম্মলনে এ বছরের লোগো গণমাধ্যমের সামনে প্রদর্শন করা হয়।
সাত বছরে পা দেওয়া এই আয়োজনে দেশবাসীকে আবার মুগ্ধ করতে এবারের আয়োজনে থাকছে অভিনব কিছু চমক। বিগত বছরের মতো এবারও ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেট ও খুলনা জেলায় এই উৎসব আয়োজিত হতে যাচ্ছে। বরাবরের মতো এ বছরও ঢাকায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের রাস্তাজুড়ে প্রায় ৩ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে আঁকা হবে দেশের বৃহত্তম আলপনা। এ ছাড়া অন্যান্য শহরেও প্রতিটি আলপনা আঁকা হবে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে। ঢাকাসহ পাঁচটি শহরেই ১৩ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ রাতে একযোগে আলপনা আঁকার কার্যক্রম শুরু হবে। প্রখ্যাত শিল্পী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও শেখ মনিরুজ্জামান লিটন আলপনা আঁকার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
১৩ এপ্রিল রাত ১১টায় (৩১ চৈত্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ) শুরু হয়ে চলবে ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ) ভোর পর্যন্ত। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে আয়োজিত এই উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অনুষ্ঠানে ‘আলপনায় বৈশাখ’–এর মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার এ কে এম সাদেক নেওয়াজ বলেন, এ ধরনের একটি উদ্যোগের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে থাকতে পারার বিষয়টি বার্জারের জন্য গৌরবের। গত সাত বছরের পরম্পরায় এ আয়োজনকে ঘিরে দেশের সবার মধ্যে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বিশেষ উদ্দীপনা কাজ করে। নববর্ষে দেশকে রাঙিয়ে ঐহিত্যের এ ধারাকে তরুণদের মধ্যে পুনরুজ্জীবিত রাখার প্রয়াসে কাজ করে যেতে চায় বার্জার। আমরা বিশ্বাস করি এ ধরনের আয়োজন সমাজের গ্লানি ও জরা মুছে দিয়ে আমাদের জীবনে রঙের ছটা নিয়ে আসে।
এশিয়াটিক ইএক্সপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ যাকের বলেন, এ উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে অন্তর্নিহিত চিন্তা ছিল আমাদের সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐকতানের মূল বিষয়। এ বছরের উৎসবের স্মারককে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্যতায় চিত্রিত করা হয়েছে। লোগোটি একটি কাগজের চরকি, যা আমাদের উৎসবময়তার পরিচায়ক এবং একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানরত ঐকতান ও সমৃদ্ধির প্রতীক। ধারাবাহিকভাবে আলপনায় বৈশাখ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করায় বার্জার পেইন্টসের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
শিল্পী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আলপনায় উৎসব উদযাপন এখনো বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম এক অনুষঙ্গ। আমাদের নিজস্ব লোকশিল্পগুলোর মধ্যে সম্ভবত এ প্রাচীন মাধ্যমটি এখনো টিকে আছে। তাই এ উৎসবের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমি গর্বিত।’
এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির ভাইস চেয়ারপারসন সারা যাকের বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে আলপনা একটি অবিচ্ছেদ্য লোকশিল্প। উৎসবের রঙিন দিকটি তুলে ধরতে ও শিল্পীসত্তার স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশে আলপনা অনন্য এক শিল্প মাধ্যম। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি রমণীরা বিভিন্ন উৎসবে ও পালাপার্বণে গৃহসজ্জায় আলপনা এঁকে এসেছেন। যদিও বর্তমানে এর প্রচলন তেমন একটা দেখা যায় না। তাই পয়লা বৈশাখকে উপলক্ষ করে আমাদের শিল্পসংস্কৃতির প্রাচীনতম এই অনুষঙ্গটিকে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে আমরা আবারও দেশবাসীকে একীভূত করতে চাই।’
এ উদ্যোগ নিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগের জন্য একটি মাইক্রো সাইট ও ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। বার্জার আলপনার নমুনা রেখা এর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা হবে। এশিয়াটিক ইএক্সপি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষকতা করছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ।