পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলছেন, তিনি কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারতের সাথে সংলাপ চান, এবং কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলের জন্য তা হবে এক দারুণ ব্যাপার।
ইমরান খান আরো বলেন, কাশ্মীর সংকট নিষ্পত্তি করার জন্য ‘হয়তো নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি নির্বাচনে জিতলেই ভালো হবে।’
বিবিসির জন সিম্পসনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া ইমরান খান বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যে মতভেদ তা শুধু সংলাপের মাধ্যমেই মীমাংসা হতে পারে।
‘ভারতের নির্বাচনে মোদী জিতলেই ভালো’
এমন সময় ইমরান খান এ সাক্ষাতকার দিলেন যখন ১১ই মে থেকে ভারতে লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে।
এর আগে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর জৈশ-ই-মোহাম্মদের এক আক্রমণের পর ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। ভারত পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালিয়ে জঙ্গী ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি করে, অন্য দিকে পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে।
ইমরান খান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনের আগে জনপ্রিয়তা পাবার জন্যই পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিলেন।
তবে মি. খান আরো বলেন যে কাশ্মীর সংকট নিষ্পত্তি করার জন্য হয়তো নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি নির্বাচনে জিতলেই ভাল হবে, কারণ মি. মোদী ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দুদের সমর্থন পাবেন।
“সম্ভবত দক্ষিণপন্থী দল বিজেপি জিতলে কাশ্মীরে কিছু একটা সমাধানে পৌঁছানো যেতে পারে”- রয়টারকে দেয়া আরেক সাক্ষাতকারে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, অন্য কোন পার্টি জিতলে তারা হয়তো পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করতে গেলে হিন্দু ‘ব্যাকল্যাশের’ ভয়ে থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য তার বার্তা কী?
এ প্রশ্ন করা হলে মি. খান বলেন, “কাশ্মীর ইস্যু নিষ্পত্তি করতেই হবে এবং তা যেভাবে ‘টগবগ করে ফুটছে’ – তা চলতে দেয়া যায় না।”
ইমরান খান বলেন, “দুটি দেশেরই সরকারের প্রধান কাজ দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, যার পথ হলো সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি। আর বিরোধ একটাই – তা হলো কাশ্মীর।”
তিনি বলেন, “ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে তাহলে পাকিস্তানের পাল্টা জবাব দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। তখন পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা কেউ বলতে পারে না। আমার মনে হয় পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের ক্ষেত্রে এটা হবে একটা দায়িত্বহীন ব্যাপার।”
‘জৈশ-ই-মোহাম্মদের মত সংগঠনগুলো ভেঙে দেয়া শুরু হয়েছে’
বিবিসির জন সিম্পসন প্রশ্ন করেন, “ভারত তো বলতে পারে যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট করছে না”
জবাবে ইমরান বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংগঠনগুলো ভেঙে দিতে শুরু করেছি। জৈশ সহ এসব সংগঠনগুলোর মাদ্রাসা বা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা অধিগ্রহণ করেছি। সামরিক গ্রুপগুলোকে নিরস্ত্র করার জন্য এই প্রথম ‘সিরিয়াস’ প্রয়াস নেয়া হচ্ছে।
আপনার কি এ কাজ সম্পূর্ণ করার ইচ্ছে আছে? প্রশ্ন করেন জন সিম্পসন।
“জন, আমাদের সেই ইচ্ছে আছে, এবং তা পাকিস্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থে” – বলেন ইমরান।
ভারতের প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, “ভারত একসময় একটা উদার সমাজ ছিল। ভারতে এখন যা হচ্ছে, তা আমি কখনো দেখবো বলে ভাবি নি।”
‘আসিয়া বিবি কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছাড়বেন’
পাকিস্তানে আসিয়া বিবি নামে যে খ্রীষ্টান নারী ধর্মদ্রোহিতার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন, এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে সে দণ্ড খারিজ হয়ে যায় – ওই ঘটনা সম্পর্কেও কথা বলেন ইমরান খান।
আসিয়া বিবি এখনো পাকিস্তানেই গোপন আশ্রয়ে অবস্থান করছেন।
ইমরান খান বলেন, আসিয়া বিবি খুব শিগগীরই পাকিস্তান ত্যাগ করবেন।
“এখানে একটু জটিলতা আছে, এবং আমি এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলতে পারি না। কিন্তু আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে আসিয়া বিবি নিরাপদে আছেন, এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশত্যাগ করবেন” – বলেন তিনি।
বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই আসিয়া বিবিকে আশ্রয় দিতে চেয়েছে।
‘সশস্ত্র মিলিশিয়াদের সক্রিয় হতে দেবো না’
বিবিসির পাশাপাশি বার্তা সংস্থা রয়টার ও মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসকেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইমরান খান।
তাতে তিনি বলেন, পাকিস্তান আর সেদেশের ভেতরে সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে সক্রিয় হতে দেবে না।
মি. খান বলেন, “বাইরের চাপের কথা ভুলে যান। আমাদের দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সশস্ত্র মিলিশিয়াদের আর কাজ করতে দেবো না।
১৯৮০-র দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল।
সেদিকে ইঙ্গিত করে ইমরান খান বলেন, “পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু এসব গ্রুপের এখন আর কোন প্রয়োজন নেই।”
মি. খানকে প্রশ্ন করা হয়, পাকিস্তানকে কে নিয়ন্ত্রণ করে- তিনি, না পাকিস্তানের সামরিক এস্টাব্লিশমেন্ট? জবাবে ইমরান খান বলেন, তারা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।