নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারা ৬ মাসের মধ্যে সংশোধন করে আপোষযোগ্য বিধান করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আইন সংশোধনে আইন মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এই আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের এই রায়কে অনুসরণ করতে দেশের সকল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশে ১১ (গ) ধারার কোনো মামলা উভয়পক্ষ আপোষ করতে চাইলে সে সুযোগ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ধারায় চট্টগ্রাম আদালতে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই লাভলি আক্তারের করা মামলায় তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে দেওয়া ৩ বছরের সাজা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। লাভলি আক্তার ও শফিকুল ইসলামের জবানবন্দী গ্রহণ করে আজ বুধবার এ রায় দেন।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এক রায়ে এ আদেশ দেন। আদালতে লাভলি আক্তারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন হাসান মাহমুদ খান ও শফিকুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সামিউল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।
আদালত বলেছেন, সরকার যৌতুক নিরোধ আইন করেছে গতবছর। এই আইনে শাস্তি ৫ বছর। এ আইনের মামলা আপোষ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারও সামাজিক সকল বিরোধ আপোষের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ করছে। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারায় আপোষযোগ্য নয়। এই ধারার মামলায় শাস্তিও মাত্র ৩ বছর। আদালত বলেন, নানা কারনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হতেই পারে। আর ঠুনকো অভিযোগে হাজার হাজার মামলা হচ্ছে। আইনে যদি আপোষের বিধান থাকতো তাহলে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা আসত না। মামলা জট রোধে আপোষের বিধান থাকা দরকার। দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট চিন্তা করে এই আইন সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের লাভলি আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার গচিহাটা গ্রামের শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয় ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি। এরপর শফিকুল ইসলামের চাকরির কারণে এই দম্পতিকে চট্টগ্রামে থাকতে হয়। বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে চরম বিরোধ বাঁধে। এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারায় যৌতুকের অভিযোগ লাভলি আক্তার তার স্বামী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১২ সালের ২৩ জুলাই মামলা করা হয়। এই মামলায় বিচার শেষে শফিকুল ইসলামকে ৩ বছরের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ১০ জুলাই রায় দেন। এই রায়ের সময় শফিকুল ইসলাম পলাতক ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি নিম্নআদালতে আত্মসমর্পন করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শফিকুল নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ও জামিনের আবেদন জানান। হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ তার জামিন মঞ্জুর করলে পরে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরইমধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ মিটে যায়। তারা আবার একসঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। আড়াই মাস আগে তাদের সংসারে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু ২০১২ সালের মামলা তাদের সামনে এক বিরাট ঝামেলা হিসেবে টিকে রয়েছে। এ অবস্থায় শফিকুল ইসলাম নিম্ন আদালতে মামলায় পুনরায় বিচারের জন্য পাঠাতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। আদালত রুল জারি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল আড়াই মাসের শিশুকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী আদালতে হাজির হন। আদালত তাদের উভয়ের বক্তব্য জানতে চান। উভয়েই আপোষ করার পক্ষে মত দিয়ে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। এ অবস্থায় হাইকোর্ট উল্লেখিত আদেশ দেন।