অভিযোগ, কুৎসা, কাদা ছোড়াছুড়ি নির্বাচনী প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এগুলোকে চুম্বক আকর্ষণও বলা যায়। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বটি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলায় গতকাল মঙ্গলবার এক নির্বাচনী জনসভায় মোদি দাবি করেন, ‘দেশভাগের সময় কংগ্রেস দায়িত্বশীল আচরণ করলে পাকিস্তানের জন্ম হতো না।’ আর এই অভিযোগের মধ্যেই তিনি দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদকে মিশিয়ে দিয়েছেন সুনিপুণ কথার তোড়ে। বলেছেন, এবার যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবে তাদের উচিত সেই ভোট পাকিস্তানের বালাকোটে যে বিমানসেনারা হামলা চালিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা। আর যেহেতু এ আদেশ এসেছে মোদির কাছ থেকে, কাজেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের দায়িত্ব হবে পদ্মফুলে (বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক) সিল মারা। কারণ বিজেপির পক্ষে পড়া প্রতিটি ভোট ‘সরাসরি আমার কাছে আসবে’—এমনটাই দাবি মোদির।
রোজকার মতো গতকালও কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশভাগের সময় কংগ্রেস নেতারা দায়িত্বশীল আচরণ করলে পাকিস্তানের জন্ম হতো না। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের ইশতেহার যেন পাকিস্তানের ভাষাতেই কথা বলছে। তাঁর অভিযোগ, জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য যাঁরা পৃথক প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, কংগ্রেস ও তাদের শরিক তাঁদেরই সমর্থন করছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লার মন্তব্য টেনে এই কথা বলেছেন মোদি।
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী গতকাল বলেন, নতুন ভোটাররা যদি প্রথম ভোট বিজেপিকে দেয় তাহলে শক্তিশালী দেশ গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রথম ভোট সবার আবাসন নিশ্চিত করবে।’ পাকিস্তানে হামলা চালানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘আপনাদের প্রথম ভোট কি ওই বীর জওয়ানদের কথা ভেবে দেওয়া যেতে পারে?’ কাশ্মীরের পুলওয়ামার হামলায় যে সেনারা নিহত হয়েছেন তাঁদের প্রসঙ্গ তুলেও একই কথা বলেন মোদি।
বিজেপির প্রায় সব নির্বাচনী সমাবেশেই ঘুরেফিরে পুলওয়ামা ও বালাকোটের প্রসঙ্গ আসে। যদিও নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী প্রচারে টেনে আনার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ জারি করেছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মেনে চলাকে তারা প্রয়োজন বলে মনে করছে না। মোদিসহ বিজেপি নেতাদের দাবি, দেশ বা জাতীয়তাবাদ নিয়ে একা বিজেপি ভাবছে। অন্য দলগুলো শুধু ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। বিজেপির এমন অবস্থানে অসন্তোষ প্রকাশ করে গত সপ্তাহে দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আদবানি তাঁর ব্লগে বলেন, ‘বিরোধীরা সবাই দেশবিরোধী—এমন অবস্থান আমাদের আগে কখনোই ছিল না।’
এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় সাড়ে আট কোটি ভোটার প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। এর মধ্যে ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এই কম বয়সী ভোটারদের সমর্থন টানতেই আবেগ জড়ানো কণ্ঠে গতকালের ভাষণটি উৎসর্গ করেন মোদি। সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।