মোদির গলার কাঁটা তিন নারী

মোদির গলার কাঁটা তিন নারী

ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এবারের রণকৌশলকে এক শব্দে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলা যায়, ‘একক মুখের প্রদর্শনী’। কেন্দ্রের হোক বা রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে এই প্রচারের শুরু এবং তাঁকে দিয়েই শেষ। মোদির সর্বভারতীয় ইমেজকেই নানা কায়দায়, নানা আঙ্গিকে উপস্থাপনের কসরত করে চলেছে বিজেপি। তাঁর বিরোধী শিবিরের কথা যদি বলতে হয় তাহলে দেখা যায়, সেখানে জোট নেই, একাট্টা নয় বিরোধীরা। তবে এককভাবে যে ব্যক্তিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা মোদিকে যথেষ্ট নাজেহাল করার ক্ষমতা রাখেন। বিশেষ করে এখানে তিন নারীর তৎপরতা আলাদা করে উল্লেখ করার মতো। প্রথমজন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয় উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী এবং সর্বশেষ হচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এই তিন নারীকে নিয়েই এই প্রতিবেদনের আয়োজন।

দিদি
বাংলা ছাপিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বভারতীয় পরিচয় এখন এটি। আগুনঝরা বক্তব্য রাখতে অভ্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের প্রথম এই নারী মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের এই জনপদটির জনসংখ্যা পুরো জার্মানির চেয়ে বেশি এবং বলাবাহুল্য বিজেপির জন্য এই রাজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৬৪ বছর বয়সী এই নারী মোদির কট্টর সমালোচক। মোদিবিরোধী সর্বভারতীয় বিরোধী দলাগুলোর জোটের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘আমরা দেশ রক্ষায় বিজেপির বিরুদ্ধে একাট্টা।’

মমতার নিজ রাজ্যে অবশ্য বিজেপির বেইল নেই। একসময় কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়ত্ব পালনকারী তাঁর সাদাসিধে ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। দিল্লিভিত্তিক রাজনৈতি বিশ্লেষক মনিষা প্রিয়ম বলেন, ‘মমতা আপাদমস্তক যোদ্ধা। নির্বাচনে রাজ্যে তাঁর দলের ফল ভালো হলে কেন্দ্রেও তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’ এ ছাড়া মমতা লেখক, কবি ও চিত্রশিল্পী।

দলিত রানি
এ উপাধি উত্তর প্রদেশের মায়াবতীর। ৬৩ বছর বয়সী এ নারী সারা জীবন নিম্নবর্ণের দলিত সম্প্রদায়ের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ফলও পেয়েছেন প্রায় হাতে হাতে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল (২০ কোটি) রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ দফায় তাঁর দল বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি) ফল ভালো করতে পারলে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা থাকবে।

তবে মায়াবতীর সমালোচনায় কম নেই। ফাঁস হয়ে যাওয়া মার্কিন দূতাবাসের এক বার্তায় দেখা যায়, এক জোড়া স্যান্ডেল আনার জন্য তিনি একবার তাঁর ব্যক্তিগত জেট বিমান ব্যবহার করেন। এ ছাড়া একটি পার্ক নির্মাণ করে তাঁর পুরোটাতে নিজের কংক্রিটের মূর্তি বসান। প্রিয়ম অবশ্য বলছেন, ‘উত্তর প্রদেশে মায়াবতীতে অগ্রাহ্য করে কোনো রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তাঁকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

ইন্দিরার পুনর্জন্ম?
ভারতের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে দেখা হয় তাঁর দাদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিমূর্তি হিসেবে। প্রিয়াঙ্কার হাঁটাচলা-কথা বলা, এমনকি শাড়ি পরার ধরনেও অনেকেই তাঁর দাদিকে দেখতে পান। ভারতের রাজনীতিতে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের সর্বশেষ সংযোজন প্রিয়াঙ্কা। গত জানুয়ারি থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া প্রিয়াঙ্কাকে দেখা হচ্ছে মুক্ত, পরিচ্ছন্ন বাতাস হিসেবে।

কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী রাহুল গান্ধীর বোন ৪৭ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তর প্রদেশের কংগ্রের সমর্থকদের চাঙ্গা করার। উত্তর প্রদেশ এখন বিজেপির ঘাঁটি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কংগ্রেস ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয় এই রাজ্যে। সেই চরম লজ্জায় গুটিয়ে যাওয়া পরিস্থিতির মধ্যেই কাজ শুরু করেছেন প্রিয়াঙ্কা। রোড শো, গঙ্গাযাত্রা-কিছুই বাদ রাখছেন না। মোদির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় আবেদন রাখার মতো পরিপক্বতা বা অভিজ্ঞতা প্রিয়াঙ্কার না থাকলেও উত্তর প্রদেশ তাঁকে হয়তো হতাশ করবে না। সূত্র : এএফপি।

আন্তর্জাতিক