পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য নিয়ে আসা জাহাজ কোনো জট ছাড়াই ভিড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। জাহাজগুলো কনটেইনারবোঝাই পণ্য নিয়ে বহির্নোঙরে পৌঁছে ছোট জাহাজে স্থানান্তর করার পর দ্রুত তা গুদামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেও লাইটার বা ছোট জাহাজের সংকটে পড়তে হয়নি আমদানিকারকদের।
রমজানের পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে জটে না পড়ার এ ঘটনা গত কয়েক বছরের মধ্যে বিরল। বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য বড় সুখবরও। এখন পণ্য আমদানিতে জাহাজ-জটমুক্তির সুবাদে ব্যয় সাশ্রয়ের সুফল পণ্যের দামে পড়বে কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। কেননা প্রতিবছরই রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার বড় কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার জটের ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে সামনে নিয়ে আসেন। এবার সেই অজুহাতের সুযোগ নেই। এবার বহির্নোঙর কিংবা জেটিতে অপেক্ষা ছাড়াই পণ্য খালাস করতে পারায় আমদানিকারককে বাড়তি মাসুল গুনতে হচ্ছে না। সেই সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের সুফল রমজানে পণ্যে পড়া উচিত বলে মনে করে ভোক্তারা।
প্রায় ৬০ হাজার টন ছোলা, ডাল ও সরিষা নিয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে জাহাজ ‘স্পিরিট অব সি ট্র্যাক’। ১৫ মার্চ জাহাজটি বহির্নোঙরে পৌঁছে। সেখান থেকে পণ্য ছোট জাহাজে করে নিজেদের গুদামে নিচ্ছে বিএসএম গ্রুপ।
জানতে চাইলে বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বহির্নোঙর এবং জেটিতে জাহাজ নিয়ে এবার জটে পড়তে হয়নি আমাদের। নির্বিঘ্নে পণ্য বন্দর হয়ে গুদামে পৌঁছেছে; তবে কর্ণফুলীর ঘাটগুলোয় কিছুটা ভোগান্তি ছিল। এর পরও আমি বলব, এটা আমাদের জন্য বড় সুখবর।’ রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখনো পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রয়েছে। রমজান পর্যন্ত তা বাড়ার কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।’
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৫৩ হাজার টন ছোলা ও মটর ডাল নিয়ে অবস্থান করছে আরেকটি বিদেশি জাহাজ ‘গেন্ট’। ঢাকার প্রতিষ্ঠান এন আর ট্রেডিং রমজান সামনে রেখে এই পণ্য এনেছে। ৩১ মার্চ জাহাজটি বন্দরের জলসীমায় পৌঁছে লাইটারিং শুরু করেছে। খোলা পণ্যবাহী এ ধরনের জাহাজ ছাড়াও কনটেইনারে রমজানের পণ্য গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বন্দরে পৌঁছেছে। আর তা আমদানিকারকের গুদাম হয়ে পাইকারি বাজারেও পৌঁছে গেছে।
প্রতিবছর রমজান এলেই বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম বানিয়ে পণ্য বিক্রি করে কিছু আমদানিকারক। উদ্দেশ্য গুদামে নেওয়ার পরিবহন খরচ ও গুদাম ভাড়া সাশ্রয় করা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আগেভাগে পদক্ষেপ নেওয়ায় এবার ব্যবসায়ীদের সেই কৌশল কাজে আসেনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্দর ইয়ার্ডে জমে থাকা রমজানের পণ্যবাহী কনটেইনার সরিয়ে নিতে আমরা দুই মাস আগে থেকেই চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি কার্যকর করতে চেম্বারসহ সব বাণিজ্য সংগঠনকে নিয়মিত অনুরোধ করেছি। এতে সুফল মিলেছে।’
তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, ‘রমজানের ভোগ্যপণ্য বন্দরে আটকে নেই। এবার খুব দ্রুত ছাড় করে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর রমজান শুরুর আগেই এসব পণ্যবাহী জাহাজ জেটিতে ভিড়তে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ায় জটে পড়তে হয়নি। রমজান শুরুর আগেও জটে পড়ার শঙ্কা নেই।’
এত দিন রমজানে পণ্যের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জাহাজজটের কথা বলতেন ব্যবসায়ীরা। ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজ বহির্নোঙরে প্রতিদিন বাড়তি বসে থাকার জন্য আকারভেদে আট থেকে ১২ হাজার ডলার গুনতে হতো। এ রকম পাঁচ দিন বাড়তি বসে থাকলেই পণ্য পরিবহন খরচ যেত ৬০ হাজার ডলার। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতার কারণে এবার সেই বিপুল খরচ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম সামশুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘বন্দরের পদক্ষেপ ও দক্ষতার ফলে পণ্য পরিবহনে যে খরচ সাশ্রয় হয়েছে সেটা অবশ্যই রমজানের ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। ব্যবসায়ীদের জন্য এখন প্রমাণ করার সময় ভোক্তারা এবার অন্তত সাশ্রয়ে রমজানের ভোগ্যপণ্য কিনতে পারবে।’