বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহবান ভারতের ৬০০ শিল্পীর

বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহবান ভারতের ৬০০ শিল্পীর

ভারতের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির প্রায় ৬০০ জনেরও বেশি অভিনয় শিল্পী যৌথভাবে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) একটি বিবৃতিতে ‘গোড়ামি, ঘৃণা এবং অনীহা’-কে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের নাগরিকদের প্রতি। যে ৬১৬ জন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে নাসিরুদ্দিন শাহ ছাড়াও রয়েছেন অমল পালেকর, অনুরাগ কাশ্যপ, ডলি ঠাকুর, লিল্লেটে দুবে, অভিষেক মজুমদার, অনামিকা হাকসার, নাভতেজ জোহর, এমকে রায়না, মহেশ ডাট্টানি, কনকনা সেন শর্মা, রত্না পাঠক শাহ এবং সনজনা কাপুর।

বিবৃতিতে তারা ভোটারদের কাছে আবেদন করেছেন, ভোটাররা যেন বিজেপি ও তাদের মিত্রদের বিপক্ষে ভোট দেন। একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারতের জন্য যেন তারা ভোট দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দূর্বলকে সবল করা, স্বাধীনতার সুরক্ষা, জলবায়ু রক্ষা এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাধারাকে বজায় রাখার জন্য ভোট দিন।’

ভারতের ১২টি ভাষায় প্রকাশ করা এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীন ভারতের বর্তমান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় জনতা পার্টি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু দলটি দেশকে হিন্দুত্ববাদিতার দিকে নিয়ে ঘৃণা ও সহিংসতায় নিমগ্ন হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পাঁচ বছর আগে যে মানুষটি ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তার নীতির কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবনপ্রবাহ নস্যাৎ হয়ে গেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, আজ ‘ভারত ধারণা’ হুমকির মুখে পড়েছে। হুমকির মধ্যে পড়েছে সঙ্গীত, নৃত্য, এমন কি হাসি-তামাশাও। ‘আজ আমাদের সংবিধান হুমকির মুখে পড়েছে। মত বিরোধ, বিতর্ক এবং বাক-স্বাধীনতা শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন করা, মিথ্যা পরিহার, সত্য বলাকে রাষ্ট্র বিরোধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’

এর আগে সর্বপ্রথম ১০০ জন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং তারপর ২০০ জন লেখকও একই ধরনের আরেকটি বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত এবং ঘৃণার রাজনীতি পরিহার করার জন্য ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

চলচ্চিত্র নির্মাতারা www.artistuniteindia.com ওয়েবসাইটে নিজেদের ওই আবেদন পোস্ট করেছেন। আবেদনে সই করেছেন ১০৩ জন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভত্রি মারান, আনন্দ পটবর্ধন, সানালকুমার শশীধরন, সুদেভন, দীপা ধনরাজ, গুরবিন্দর সিং, পুষ্পেন্দ্র সিং, কবীর সিং চৌধুরী, অঞ্জলী মন্টেরিও, প্রবীণ মর্চেলে, দেবাশিস মুখার্জি, আসিক আবু, বিনা পাল-সহ অন্যরা।

আবেদনে তাঁরা বলেছেন, দেশ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যে বিধিধ সংস্কৃতি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, তাই এখন সংকটের মুখে বলে জানিয়েছেন এইসব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। যদি আমরা নিজেদের জ্ঞান দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন না করি, তাহলে ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর হামলা চালাবে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত এইসব ব্যক্তিরা বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের প্রচারের কারণও জানিয়েছেন।

কারণগুলি হল, ঘৃণার রাজনীতি, গোরক্ষার নামে রাজনীতি, মুসলিম, দলিতদের ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরেছেন তাঁরা। দেশে সেনসরশিপের নামে বাড়াবাড়ি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
আবেদনে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ২০১৪-তে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকেই গিয়েছে।

আবেদনের শেষে বলা হয়েছে, ক্ষতিকর শাসনকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধে দেশবাসী তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। যাতে দেশের সংবিধান, বাক স্বাধীনতা, সবরকমের সেন্সরশিপ বাতিল করা যায়।

এরপর ২০০ জন লেখকও একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। অমিতাভ ঘোষ, জিত থাইল, অমিত চৌধুরি, অরুন্ধতী রায়, গিরিশ কারনাড, নবনীতা দেবসেন, অনিতা নায়ার, অরিজিৎ সেন, নয়নতারা সেহগাল, উর্বশী বুটালিয়া, নমিতা গোখলে সহ দুশো জনেরও বেশি লেখক ঘৃণার রাজনীতিকে ভোট না দিতে আবেদন জানান ভারতের সাধারণ মানুষকে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শেষ কয়েক বছর ধরে বিশেষ সম্প্রদায়, জাতি, লিঙ্গ বা অঞ্চল বিচারে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা হচ্ছে। হিংসার পরিবেশ সৃষ্টি করে নিগ্রহ করা হচ্ছে মানুষকে। এই হিংসার রাজনীতি আর তীব্র মেরুকরণের মাধ্যমে দেশকে ভাগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করেন লেখকরা।

তাঁরা জানান, একত্রিত হয়ে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন করা আশু প্রয়োজন। লেখকদের কথায়, তাঁরা চান না আর কোনও যুক্তিবাদী, লেখক বা সমাজসেবীর হত্যা হোক, লাঞ্ছনা হোক। কোনও পুরুষ বা নারী, আদিবাসী বা দলিত কাউকেই যেন আর হিংসাত্মক ঘটনার মুখোমুখি হতে না হয়।

বিবৃতিতে লেখকরা জানান, তাঁরা ভারতের সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য, দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে একজোট হয়েছেন। অবিলম্বে হিংসার রাজনীতি বন্ধ করাই তাঁদের প্রথম লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন লেখকরা।

আন্তর্জাতিক