আগামী মাসে আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজে হাত দেবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারসহ কিছু আইনি সংশোধন, সংস্কার এবং অন্যান্য বিষয়ে সংলাপ আয়োজন করা ইসির জন্য কঠিন বলেও মনে করছেন মো. শাহনেওয়াজ।
এ ধরনের সংলাপ আয়োজনের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের প্রয়োজন, তা নেই বলেই তিনি মনে করেন।
সোমবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। কিন্তু আমি এটাই মনে করি। ইসির সংলাপ আয়োজন করতে তাই পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করতে হবে।’
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হবে কিনা, তা ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন এ প্রযুক্তিটি জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য সবার আগে রাজনৈতিক মতানৈক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে সে ধরনের ঐক্য গড়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’
ইভিএম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এজন্য দেশব্যাপী একটি বড় বিশেষজ্ঞ দল গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য আড়াই লাখ ইভিএম তৈরির জন্যও বিশাল বাজেটের প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়াও বর্তমান ইভিএম মেশিনগুলোর স্থলে আরো উন্নত প্রযুক্তি ও সহজে ব্যবহারের উপযোগী মেশিন ও প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েও চিন্তা করতে হবে।’
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আগামী মাসে আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণে হাত দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’
তিনি বলেন, ‘দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে ইসি।’
নির্বাচনের আগে সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদন নিয়ে জনসংখ্যা অনুপাতে সীমানা পুনর্নির্ধারণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০১৪ সালের প্রথম দিকে দশম সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।
মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘জুন মাসে পঞ্চম আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এরপরই সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু করবো আমরা।’
গত বছর মার্চে দেশে পঞ্চম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। জুলাইয়ে এ আদমশুমারির প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়েছিল, বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার।
পঞ্চম আদমশুমারিতে দেশের ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ গণনা থেকে বাদ পড়েছেন বলে মনে করছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস। এ ভুল সংশোধন করে আগামী জুন মাসের মধ্যে জনসংখ্যার চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রতি ১০ বছর পর পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও নির্বাচন কমিশন কখনোই নিয়মিতভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করেনি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮৪ সালের পর প্রথম একযোগে সারাদেশে নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাসের কাজে হাত দেয় ২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ৩০০ আসনের জেলাওয়ারি আসন পুনর্বণ্টন করে ইসি।
১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে আংশিকভাবে এ কাজ করা হয়। প্রতিবারই সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কমিশনকে শত শত মামলা মোকাবিলা করতে হয়েছে।
আগামীতে ঢাকা মহানগরে সংসদীয় আসন ১০টিতে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
বর্তমানে ঢাকা জেলায় সংসদীয় এলাকা ২০টি। এর মধ্যে ডিসিসিতে আসন সংখ্যা ১৩টি। অষ্টম সংসদে এ সংখ্যা ছিল ঢাকা জেলার ১৩টির মধ্যে মহানগরীতে ৮টি।
জানা গেছে, ইসি ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) একটি জেলার সমতুল্য ইউনিট গণ্য করে সংসদীয় আসন ১০টিতে নির্দিষ্ট করে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করলেও তা এখনো সরকারের অনুমোদন পায়নি। সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশের সর্বোচ্চ ১২ মাসের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজ সম্পন্ন করার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনেও।