প্রতিনিয়ত জমি জবরদখলের নিত্যনতুন ফন্দি ফিকির খুঁজছে আশিয়ান গ্রুপ। প্রকল্পের সরকারি অনুমোদন না পেলেও এবার জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লাগিয়ে খাল দখলে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার হুমকিতে পড়েছে রাজধানীর খিলক্ষেত ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রায় দেড় মাস ধরে মাটি ফেলে ভরাট চলছে এক সময়ের স্রোতস্বিনী বোয়ালিয়া খালে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই অপতৎপরতা চলতে থাকলেও সরকারি সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগ এসব বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আর আস্কারা পেয়ে নির্বিঘ্নেই চলছে খাল দখলের মচ্ছব।
সোমবার সরেজমিন খিলক্ষেতের বরুয়া এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ে বুলডোজার দিয়ে খাল ভরাট করার দৃশ্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খিলক্ষেতের ছিটকি বিল থেকে উত্তর দিকে এঁকেবেঁকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বোয়ালিয়া খাল মিশেছে বালু নদীতে। খিলক্ষেত-ইছাপুর সড়কের বরুয়া এলাকায় খালের উপর একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের পাশে খাল ঘেঁষে চলছে আশিয়ান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ। একই সঙ্গে চলছে মাটি ফেলে খাল ভরাট করার অপকর্মটিও।
১২০ প্রশস্ত খালের ৪০ ফুট এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ ভরাট করতেও চলছে জোর তৎপরতা। ২ বিঘার বেশি জমি এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের বেলায় হাসপাতালের নির্মাণকাজ চললেও খাল ভরাটের কাজ শুরু হয় মূলতঃ রাতে। সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকে আশিয়ান গ্রুপের কয়েকশ’ সশস্ত্র ক্যাডার।
সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সচেতন কেউ কেউ আগে আশিয়ানের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও মামলা আর প্রাণের ভয়ে এখন আর কেউ সাহস করেন না এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে।
বরুয়া গ্রামের কৃষক মনির মোল্লা (৩৮)। এক সময় বোয়ালিয়া খালে মাছ ধরে আর কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
মনির মোল্লা বলেন, “একসময় সব দেশি মাছই এই খালে পাওয়া যাইতো। এ্যাহন পাওয়া যায় শুধু বালু। পানি নাই বললেই চলে।“
কথা হয় একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মনসুর শিকদার (৪০) সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাওয়া, বেতুলি, সোনারখোলা, আশকোনা, বরুয়া, যাবন প্রভৃতি এলাকার কৃষিজীবী মানুষ নির্ভরশীল ছিল এই খালের উপর। এখন দিন দিন খালের পরিসর ছোট হয়ে আসায় এসব মানুষের জীবিকার উৎসও হচ্ছে সংকুচিত ।
তার আশঙ্কা অচিরেই আশিয়ান গ্রুপ ভরাট করে আটকে দেবে বোয়ালিয়া খালের প্রবাহ। এতে এই খালের উজানের এলাকাগুলো স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পতিত হবে। কারণ এসব এলাকার বৃষ্টি বা অন্যান্য উৎসের পানি নির্গত হওয়ার একমাত্র পথ এই খাল।
খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী দেওয়ান। ইতিপূর্বে সাধারণ জনগণের সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার সোচ্চার হয়েছেন আশিয়ানের ভূমি জবরদখলের বিরুদ্ধে। কিন্তু অর্থ আর পেশিশক্তির কাছে বরাবরই পরাস্ত হয়েছে প্রতিরোধ সব চেষ্টা।
তাই এখন অনেকটা হতাশ হয়েই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। কেরামত আলী দেওয়ান বলেন, “এইসব ঠেকাইবার জন্য বহুত বাড়াবাড়ি করছি। কিন্তু অর্থের কাছে কুলাইয়া উঠতে পারি নাই। প্রশাসনও অ্যাকটিভ না।“
তিনি জানান, আশিয়ান অবৈধভাবে জমি-খাল ভরাট করার কারণে দক্ষিণখান, পলান, উত্তরপাড়ারসহ অনেক এলাকাতে এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বরুয়া এলাকার আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ও এই জলাবদ্ধতার কবলে। বোয়ালিয়া খাল ভরাট হয়ে গেলে এই অঞ্চলের বেশির ভাগই পানিতে তলিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা তার।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কেরামত দেওয়ান আরো বলেন, “আশিয়ানের এই সব অপকর্ম ও অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে এলাকার সাধারণ মানুষ বহুবার নেত্রীর (স্থানীয় সাংসদ ও স্বরাস্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন) কাছে অভিযোগ করেছেন। আমিও বহুবার গিয়েছি, কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি। এবিষয়ে জনগণ খুবই মনক্ষুন্ন ও হতাশ।“ এতে দলীয় ইমেজ দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মুনীর চৌধুরীর কাছে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।“