পরিচালকদের শেয়ার ধারণের শর্ত বহাল, রিট খারিজ

পরিচালকদের শেয়ার ধারণের শর্ত বহাল, রিট খারিজ

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ারধারণের  বিষয়ে গত ২২ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তা বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট ।

সোমবার বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এসইসির জারি করা প্রজ্ঞাপনে শব্দগত দু’ একটি ভুল থাকলেও এর আধেয় ঠিক আছে। এটা আইন বর্হিভূত নয়। আইন অনুযায়ী সেটা করেছে। আর উপমহাদেশের এটা নতুন নয়। ভারতে এ ধরনের নিয়ম আছে। বাংলাদেশে মাত্র শুরু হয়েছে। যাতে নিরীহ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পরিচালকরা প্রতারণা না করতে পারে।

আদালত ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে রক্ষা করেছেন: ব্যারিস্টার তাপস
রায়ের পরে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ে আমরা আনন্দিত। অনেক আত্মত্যাগের পরে গত নভেম্বর মাসে এসইসি ও সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু এ সিদ্ধান্তকে ধ্বংস করার জন্য কিছু পরিচালক আদালতে রিট দায়ের করেছিলো। কিন্তু আদালত ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে রক্ষা করেছেন। উদ্যোক্তা পরিচালকদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী যুবরাজের আত্মা শান্তি পাবে।’

ব্যারিস্টার তাপস আরও বলেন, ‘গত বছরের ২২ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ এবং সমষ্টিগতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের বাধ্যবাধকতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এজন্য ২১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে যদি তাদের কাছে ২ শতাংশ শেয়ার না থাকে তবে তারা পরিচালক পদ হারাবেন।  এর ফলে আজকের পর থেকে যাদের কাছে ন্যূনতম শেয়ার থাকবে না তারা পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না।’

‘আদালত সময় বাড়ায় নি উল্লেখ করে ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এসইসির দেওয়া সময়ই বৈধ রইলো। এখন আর বাজারকে কেউ ম্যানিপুলেট করতে পারবে না।’

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ বলেন, ‘এ বিজয় জনতার বিজয়, ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর বিজয়। যে সব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তারা আদালতের এ রায়ে রক্ষা পেলো।’

তিনি বলেন, বাজার এখন আপন গতিতে চলবে।

রায়ের পর ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আদালত চত্বরে মিছিল করেন।

এ রায়ে পপুলার লাইফ, এনসিসি ব্যাংক এবং ডেল্টা লাইফের পরিচালকরা হাইকোর্টে যে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন তার নিষ্পত্তি হলো।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন, ব্যারিষ্টার রফিক- উল হক ও ড. জহির, এসইসির পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ এবং বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ।

প্রসঙ্গত, এসইসির একটি প্রজ্ঞাপন নিয়ে গত ৮ এপ্রিল ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (এনসিসিবিএল) পরিচালক শেখ আব্দুল মোমিন রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত একটি রুল জারি করে চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থসচিব, বাণিজ্যসচিব, এসইসির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এনসিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মের রেজিস্ট্রার, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে রুলের জবাব দিতে বলেন।

এরপর গত ৮ মে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ারধারণের বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) জারি করা প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ফিনিক্স ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের একাধিক পরিচালক আরও দুটি রিট করেন হাইকোর্টে।

পরবর্তীতে মামলা দুটির শুনানি শেষে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ারধারণের বিষয়ে এসইসির জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ২২ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের ব্যক্তিগতভাবে দুই শতাংশ এবং সমষ্টিগতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের বাধ্যবাধকতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এজন্য ২১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে যদি তাদের কাছে ২ শতাংশ শেয়ার না থাকে তবে তারা পরিচালক পদ হারাবেন।

অর্থ বাণিজ্য