ভারতে শুরু হয়ে গেছে ভোটের দামামা। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ভোটযুদ্ধের আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ‘যোগ্যতা’ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে ভারতে। বলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে লড়াই করা রাহুলের পক্ষে সম্ভব হবে না। যুদ্ধ শুরুর আগেই নাকি হেরে বসেছেন তিনি!
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির অনলাইন সংস্করণের মতামত বিভাগে একটি লেখা লিখেছেন বামপন্থী দল সিপিআইয়ের (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাত। তিনি রাজ্যসভার একজন সাবেক সদস্য এবং সিপিআইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের স্ত্রী। বৃন্দা বলছেন, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো সর্বভারতীয় নেতা হতে পারছেন না কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এরই মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
কেরালার একটি আসন থেকে রাহুলের নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বৃন্দা বলছেন, এটি কোনো ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। কংগ্রেস সভাপতি এমন একটি রাজ্য থেকে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন, যেখানে বিজেপি সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। ফলে বিজেপির মুখোমুখি তাঁকে হতে হবে না। কিন্তু বিজেপিবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে হলে, রাহুলকে এমন একটি আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত ছিল, যেখানে বিজেপি শক্ত অবস্থানে আছে। সে ক্ষেত্রে রাহুলের শক্তি পরীক্ষা যেমন হতো, তেমনি বড় ধরনের ধাক্কা খেত বিজেপি। কেরালা দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্য। যদি রাহুল মনে করেই থাকেন যে, দক্ষিণ ভারত থেকেই তাঁর নির্বাচিত হওয়া উচিত, তবে কেন তিনি কর্ণাটকে গেলেন না?
কর্ণাটকে বিজেপির শক্ত অবস্থানের কথা সর্বজনবিদিত। বৃন্দা প্রশ্ন তুলেছেন এই বলে যে, তবে কি বিজেপির মুখোমুখি হতে অনীহা আছে রাহুলের? আর যদি মুখোমুখিই না হন, তবে কীভাবে বিজেপি-আরএসএসের ‘বিষাক্ত’ রাজনীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন রাহুল? অথচ এই কর্ণাটকেই জোট রাজনীতি করে বিজেপিকে পরাস্ত করার ইতিহাস আছে কংগ্রেসের। তবে কি সেই কঠিন পরীক্ষায় পড়তে চাইছেন না রাহুল?
বৃন্দা বলছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে ভারতের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক শক্তিকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কিন্তু রাহুল কেরালার যে আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানে বামপন্থীদের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। ফলে লড়াইটা আর বিজেপির বিরুদ্ধে থাকছে না। অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার কথা বলছে কংগ্রেস, বামপন্থীসহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিগুলো। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভোটের প্রতিযোগিতা সেই উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বৃন্দার অভিযোগ, রাহুলের এমনতর সিদ্ধান্তে একটি বিষয় মনে হতে পারে যে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে চাইছে না কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিভিন্ন রাজ্যে বামপন্থীদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে রাজি হচ্ছে না কংগ্রেস। সব জায়গায় প্রার্থী দেওয়ায় বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে প্রগতিশীল শক্তিগুলোর মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে করে বেশি লাভবান হবে বিজেপিই।
উত্তর প্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে বৃন্দা আরও লিখেছেন, লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন এই রাজ্যে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সেখানে একচেটিয়া জয় পেয়েছিল বিজেপি। এবার কেন্দ্রে সরকার গঠন থেকে বিজেপিকে ঠেকাতে হলে, উত্তর প্রদেশে জয়ী হওয়ার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি বিজেপিবিরোধী জোট গড়েছে। অথচ কংগ্রেস তাতে সমর্থন না দিয়ে, উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানেও ভোট ভাগাভাগি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বৃন্দার অভিযোগ, বিজেপি হটানোর বদলে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করাতেই বেশি মনোযোগী রাহুল গান্ধী। উত্তর প্রদেশে কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলে দিয়েছেন যে, তাঁদের লক্ষ্য হলো ২০২২ সালে রাজ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করা।
বৃন্দার দাবি, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আসল বিরোধিতা তৈরি করেছে ভারতের আমজনতা। কৃষক ও শ্রমিকদের আন্দোলন থেকেই মোদি সরকারের পতনের দাবি জোরালো হয়েছে। চাকরি ও নিরাপত্তাহীনতায় মুখ খুলেছে তরুণ, যুব ও নারীসমাজ। সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কংগ্রেসের ভুল সিদ্ধান্তের পরও মোদি সরকারের পতন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বৃন্দা কারাত।