অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী অর্থ বছরে (২০১৯-২০) বাংলাদেশ ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার।
আজ রবিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে তার সাথে আন্তার্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আবাসিক প্রতিনিধি র্যাগনার গুডমুন্ডসনের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, নানা বাধা-বিঘ্ন সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগুচ্ছে তা প্রশংসাযোগ্য। বাংলাদেশের ডেট টু জিডিপি পৃথিবীর মধ্যে অনেক কম। এটা একটা সরকারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, আমরা এটা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ অবকাঠামো খাতে যেভাবে এগুচ্ছে তা অচিরেই শিল্প বিনিয়োগকে আরো বেশী আকর্ষণ করবে।
মন্ত্রী আইএমএফকে জানান, সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে শতভাগ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে চাচ্ছে। সরকার আশা করছে উল্লেখিত পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হলে জাতীয় পর্যায়ে দরিদ্রের হার ১৬ ভাগে নেমে আসবে। এক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার কারিগরিভাবে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলবে। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে সরকার ব্যয় বাড়াবে যাতে করে বেসরকারি খাত বেশি মাত্রায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। সবশেষে যে কাজটি সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে তাহলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জনে দক্ষতা বৃদ্ধি। এটা ঠিক দেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত এখনও কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্ত্রী ও আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি র্যাগনার গুডমুন্ডসন রাজস্ব খাত সংস্কারে অটোমেশনের বিষয়ে আইএমএফের সাথে এনবিআরের প্রকল্পটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।
মন্ত্রী বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করবে সরকার। ভ্যাট আইনে একাধিক স্তর থাকবে, এক্ষেত্রে সিঙ্গেল রেটের পরিবর্তে সহনীয় মাল্টিপল রেট থাকবে। এ ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। এ আইনের আওতায় ভ্যাট আদায়ে ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। এর ফলে ভ্যাট ফাঁকির কোনো সুযোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, ভ্যাট আদায়ে ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য এনবিআরে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশে সামাজিক সূচক উন্নত হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি কমেছে, বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তবে রাজস্ব ঘাটতি এখনও মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে। বাজেট প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আরো উন্নত করার মাধ্যমে বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা সমৃদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এর কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সংস্থার সহযোগিতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।