আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যখন উন্নয়নে কাজ করছি, তখন বিএনপি বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আর নিজেরা খুনাখুনি করে অন্যদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। তাদের চরিত্র এটাই। হত্যা লুটপাটই তাদের চরিত্র।
রোববার গণভবনে চুয়াডাঙা জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপিসহ ১৮ দলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের বাইরে ছিলেন না। `৭৫-`৭৯ পর্যন্ত আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরসহ জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জেলে ঢোকানো হয়। পরে নির্বাচন চলে এলে জিয়াউর রহমান নেতাদের ছেড়ে দেওয়া শুরু করেন।“
তিনি আরও বলেন, “ওই সময় নেতাদের উপর এতো নির্যাতন করা হয়েছিল যে, অনেকে পরে আর বাঁচতে পারেন নি। জাতীয় ৪ নেতাকে জেলের মধ্যেই হত্যা করা হয়। এসব নির্যাতনের কথা কী মানুষ ভুলে গেছে?“
গণভবনে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা বলছেন- ১৮ দলের যত নেতা গ্রেফতার হয়েছেন, এতো নেতা নাকি অতীতে কখনো গ্রেফতার হননি। আমি বিএনপির ওই নেতার নাম উল্লেখ করতে চাই না। এক সময়ে দুর্নীতির দায়ে সাজা প্রাপ্ত হয়ে পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান তিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময়কার গ্রেফতারের কথা মানুষ ভুলে যায়নি। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেত-কর্মীদের পর্যন্ত জেলে দেওয়া হয়েছিলো। এর পর এরশাদ আমলে আমি, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদেরসহ ১৫ দলের ৪০ জনকে এক সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আরো গ্রেফতার করা হয়। কেউ বাদ যায়নি।’
তিনি বলেন, “১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এরশাদ, রওশন এরশাদ, জিনাত মোশাররফ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ জাতীয় পার্টির কোনো নেতা গ্রেফতার হওয়ার বাদ ছিলো না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করা হয়। সর্বজনশ্রদ্ধেয় শহীদজননী জাহানারা ইমামও রেহাই পাননি। তার বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছিলো। আমি সাংবাদিকদের এসব কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। অনেক রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ এসব ভুলে যায়।“
শেখ হাসিনা বলেন, “২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের অত্যাচার নির্যাতনের কথা তো কেউ ভুলে যায়নি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা, হয়রানি-নির্যাতন, গ্রেফতার হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও ১০/১২টি মামলা দিয়েছিলো। ইট ভাটায় ফেলে মানুষ হত্যা করেছে।“
তিনি বলেন, “এরপর তারা শুরু করে অপারেশন ক্লিনহার্ট। একদিকে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে হত্যা, আরেক দিকে দলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা হত্যা চলতে থাকে। এরপর শুরু করে ক্রসফায়ার। ২০০১ সালের পর থেকে হিসাব নেওয়া হোক, কত মানুষ তারা পুড়িয়ে মেরেছে।“
তিনি বলেন, “এখন আন্দোলনের নামে বাসের মধ্যে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি এটা বিরোধী দলের নেত্রীর ভালো লাগছে না। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য তারা আন্দোলনে নেমেছেন। ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করেছেন, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন- এই বিচার করা যাবে না। এ জন্যই উনার আন্দোলন।“
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, “জনগনের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুন:প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। কেউ যাতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পারে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে কেউ যাতে ভোট নিয়ে খেলতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।“
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সরকারের উন্নয়ন মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। সন্ত্রাস আর নির্যাতন যেন দেশের মানুষকে আর ভোগ করতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।“