বছরখানেক আগে বাবাকে হারিয়েছেন সোমলতা। এখনো সেই শোক কাটেনি তাঁর। তাঁর বাবার আদি বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়, মায়ের নোয়াখালীতে। বর আকাশ রায়ের আদি বাড়ি কুমিল্লায়। সেদিক থেকে সোমলতা পুরোটাই বাংলাদেশের মেয়ে। বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গাইতে এসেছেন বটে, কিন্তু ময়মনসিংহ তাঁর যাওয়া হয়নি। একবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
বাড়ির কেউ কোনো দিন গান করেনি। অন্তত পেশাদারভাবে তো নয়ই। তবে গান পছন্দ ছিল সবারই। ঠাকুরমার মুখে শুনেছেন, জমিদারবাড়িতে বছরে একবার বড় আসর হতো। বড়ে গোলাম আলী সাহেব থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পীর যাতায়াত ছিল সেখানে। বলা যায়, তাঁদের পূর্বপুরুষের শোনার কান ছিল। কিন্তু খান্দানের প্রথম পেশাদার শিল্পী সোমলতা।
শৈশবে পাড়ার গানের মাসি-পিসিদের কাছে গান শিখতে শুরু করেন তিনি। সেটাও অ আ শেখারও আগে। ছড়াগান মা-ই শিখিয়েছিলেন। বয়স আট হলে শুরু করেন উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা, গুরু পণ্ডিত বিজয় সিং। কিন্তু হয়ে গেলেন রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী। পেশা হিসেবে গান শুরু করেন যখন মনোবিজ্ঞানে স্নাতক পড়ছিলেন, তখন। ব্যাক ভোকাল, কোরাস ও জিঙ্গেল—এসব দিয়েই শুরু হয়। পরে চলচ্চিত্রে গাইলেন ২০০৯ সালে। গান যদি না গাইতেন, কী করতেন সোমলতা? এমন প্রশ্নে শুরুতে বিহ্বল হয়ে যান তিনি। একটু ভেবে বলেন, ‘গান ছাড়া আর কিছু করা হতো না। মাস্টার্স ছিল মানবসম্পদে। হয়তো কোনো করপোরেট চাকরি করতাম।’
শিল্পীকে কাছে পেয়ে ছেড়ে দেওয়া যায়? অনুরোধে খালি গলায় একটি গান শোনার আবদার। সোমলতা ভেবে নিয়ে বলেন, ‘“রঞ্জনা আমি আর আসব না” ছবির গানগুলো আমার অনেক পছন্দের। এই গানগুলোর পরই সবাই আমাকে চিনতে শুরু করেছে। অনেকে জানিয়েছেন, মন খারাপের সময়ে এই গানটা তাঁদের অনেককে স্বস্তি দিয়েছে।’ ‘নিজেকে ভালোবাসো তুমি এবার’ গানটাই ধরলেন তিনি। গান শেষে বললেন, ‘ঠিক-ভুল-ভালো-খারাপ মিলিয়ে নিজের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় না আমাদের। সব সময় কেবল নিজের শক্তিশালী দিকটার প্রতিই মনোযোগী থাকি আমরা। দুর্বলতাগুলো ঢাকা পড়ে যায়, সেগুলোকে অস্বীকার করি। সেদিক থেকে নিজের সত্তার পূর্ণ ছবিটা দেখতে পারি না। সেই ছবিটা দেখার জন্য নিজের একটা সময় দরকার। এই গানটা সেই কথাই বলে।’ এক্কেবারে মনোবিজ্ঞানীদের মতো কথা, কিংবা মনোবিজ্ঞানের মাস্টারের মতো। কলকাতার একটা কলেজে মনোবিজ্ঞান পড়াচ্ছেন ১০ বছর। এমন কথা তিনি বলতেই পারেন।
সোমলতার বিয়ের খবর শোনা গেছে ছয় বছর আগে। বর আকাশ রায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী। বিয়ের আগে অবশ্য ১০ বছর প্রেম করেছেন তাঁরা। তবে একটা বেদনাবোধ রয়ে গেছে তাঁদের। কী সেটা? আকাশ থাকেন দিল্লিতে, সোমলতা কলকাতায়। মাসে একবার সপ্তাহখানেকের জন্য সোমলতা যান স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে। বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর খুব কষ্ট হয়েছে তাঁদের। আকাশ ছুটি পেতেন বছরে দুবার।
সম্প্রতি চাকরি বদলের পর কিছুটা সময় পাচ্ছেন। দুজনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে—যে যখন সময় পাবেন, একে অন্যের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এখন একটাই অপেক্ষা সোমলতার, দ্রুত এক শহরে সংসার শুরু করা।