ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় এএমআরআই (অ্যাডভান্সড মেডিকেয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট) হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৫৫ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তিনি ৫৫ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনার তদন্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশও দিয়েছেন তিনি।
উদ্ধার তৎপরতা চালছে। এখন পর্যন্ত ৮৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মুকুন্দপুর এবং সল্টলেকের এএমআরআইয়ের শাখা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ৭৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, মৃতদের অধিকাংশই মারা গেছেন ঘন ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে।
অনেক রোগী, চিকিৎসক ও নার্স হাসপাতালের ভেতর আটকা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরণের সরবরাহ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে হাসপাতালটির বেজমেন্টে প্রথম আগুন লাগে। এরপর বেজমেন্ট থেকে আগুনের ধোঁয়া ছয়তলা হাসপাতালটির প্রতিটি তলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সেখানে ১৭০টি বেডেই রোগী ভর্তি ছিল। আইসিসিইউ ও আইটিটিইউতেও রোগী ছিল।
ভোর ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন আসে, আনা হয় ৩টি ল্যাডার। স্থানীয় লোকজন, দমকলকর্মী ও পুলিশ উদ্ধার কাজ শুরু করে।
দমকলকর্মীরা ল্যাডারের সাহায্যে ওপরে উঠে ভবনের বাইরের কাচ ভেঙে রোগীদের কপিকলের সাহায্যে নিচে নামিয়ে আনছেন।
দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালের বেজমেন্টে প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। ছিল বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ। যা থাকার কথা নয়। বেআইনীভাবে গাড়ি রাখার গ্যারেজে এগুলি রাখা হয়েছিল। শট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৫০ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে কেউ আগুনে পুড়ে মারা যায়নি। সবাই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’
এই হাসপাতালে অনেক রোগীই মূমুর্ষ ছিলেন। অনেক অচেতন অবস্থায় ছিলেন। তার ফলে ঘুমের মধ্যে বা অচেতন অবস্থায় তারা মারা যান। হাসপাতালের আইসিসিইউ ও আআইটিটিইউর সব রোগী মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে ভীড় করেন। তাদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বচসা শুরু হয়। রোগীদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতির জন্য এতবড় ঘটনা ঘটেছে। তারা হাসপাতালের কাছে তালিকা দাবি করেন।
কর্তৃপক্ষ তালিকা না দিতে পারায় ক্ষুব্ধ মানুষজন হাসপাতালের একাংশে ভাঙচুর করেন।
আহত রোগীদের কলকাতার অন্যান্য হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।