দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় অনেকেই নিশ্চিত হয়ে যান, জানুয়ারি মাস থেকে তাঁরা এমপি হোস্টেলে থাকতে পারছেন না। কিন্তু একাধিক নোটিশ করা সত্ত্বেও বিগত চার মাসেও তাঁরা সেই বাসা ছাড়েননি। নির্বাচনে পরাজিত এমপিরাও সেখানে বাস করছেন। এ ছাড়া নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দ পেলেও আগের সংসদে বরাদ্দ পাওয়া এমপি হোস্টেলের বাসা এখনো দখলে রেখেছেন। এ অবস্থায় তাঁদের চলতি মাসের মধ্যে এমপি হোস্টেল খালি করতে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ন্যাম ফ্ল্যাটের ছয়টি ও নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলের চারটি ভবন আইন প্রণেতাদের আবাসস্থল ‘এমপি হোস্টেল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে ছোট-বড় দুই ধরনের ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবার নির্বাচিতদের এক হাজার ২৫০ বর্গফুট ও একাধিকবার নির্বাচিতদের এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি সংসদে এ পর্যন্ত নতুন ও পুরনো মিলে ১৬৫ জনকে লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে ৩৫০ জন এমপির জন্য মানিক মিয়া এভিনিউতে ২১৬টি ও নাখালপাড়ায় ৯১টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মন্ত্রিপাড়ায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য পৃথক আবাসনব্যবস্থা রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছর ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৯২ জনকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাঁদের অনেকেই বরাদ্দ নিয়েও ফ্ল্যাটে থাকেননি। সংসদ সদস্যদের আবাসনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংসদ কমিটির গত আগস্ট মাসের বৈঠকে এমপি হোস্টেলে থাকেন না এমন এমপিদের বাসা ছেড়ে দিতে বলা হয়। একাদশ সংসদের নতুন সদস্যদের জন্য বাসা খালি করার জন্য ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে প্রার্থী না হতে পারায় জানুয়ারিতে ওই ভবনে থাকার অধিকার হারান অনেকেই। আর নির্বাচিত না হতে পারায় সাবেক এমপিদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের অনেকেই এখনো বাসা ছাড়েননি।
এদিকে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এরই মধ্যে মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু এখনো তাঁরা এমপি হোস্টেলের বাসা ছাড়েননি। এ অবস্থায় বাসা খালি করা ও নতুনদের বাসা বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, চলতি সংসদের ‘সংসদ কমিটি’ গঠনের আগেই সাবেক এমপিদের বাসা খালি করার নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর সংসদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও সাবেক এমপি ও বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বারবার সময় নিচ্ছেন। সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে সংসদ কমিটির সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দশম সংসদের সদস্য হিসেবে আপনার নামে মানিক মিয়া এভিনিউ/নাখালপাড়ার …. নং ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদেও আপনি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন এবং মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী পদমর্যাদাসম্পন্ন পদে নিযুক্ত হয়েছেন। ইতোপূর্বে আপনার নামে বরাদ্দকৃত মানিক মিয়া এভিনিউ/নাখালপাড়াস্থ ফ্ল্যাটে বসবাস করতে আগ্রহী হলে সরকার থেকে প্রাপ্য নির্ধারিত বাড়িভাড়ার মন্ত্রীদের জন্য ৮০ হাজার টাকা এবং প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীদের জন্য ৭০ হাজার টাকার সম্পূর্ণ অংশ সংসদ সদস্য ভবনের ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদ পরিশোধ করার শর্তে আপনাকে দু-দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।’
সূত্র জানায়, এর আগে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা খালি করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি। অনেকেই টেলিফোনে কয়েক দিন সময় নিয়েছেন। তবে লিখিতভাবে কেউ কিছু জানাননি।
এ বিষয়ে সংসদ কমিটির সভাপতি ও প্রধান হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, সাবেক এমপিদের এমপি হোস্টেলের বাসা দ্রুত ছাড়তে বলা হয়েছে। আর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকে মন্ত্রিপাড়ার বাসায় ওঠার জন্য একটু সময় নিয়েছেন। কারণ পুরনোরা বাসা ছাড়ার পর সেখানে কিছু সংস্কারকাজ থাকে। সেগুলো শেষ হলেই তাঁরা এমপি হোস্টেল ছেড়ে দেবেন আশা করছি। আর কেউ সরকারের বরাদ্দ বাসাভাড়ার টাকা পরিশোধ করলে তাঁদের নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।