বন্দি পাইলটকে দেখে পাকিস্তানের দিকে ৬টি মিসাইল তাক করে ভারত

বন্দি পাইলটকে দেখে পাকিস্তানের দিকে ৬টি মিসাইল তাক করে ভারত

কাশ্মীর হামলা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল এটা সবাই জানে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ ছিল, তা এবার বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের চোখ এবং হাত বাঁধা ছবি দেখার পরই যুদ্ধের হুঙ্কার ছেড়েছিল ভারত। ৬টি মিসাইল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তাক করে রেখেছিল নয়াদিল্লি। পাল্টা হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত মার্কিন হস্তক্ষেপে এই পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান উদারতা নয়, মার্কিন চাপেই বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল ইমরান খানের সরকার। এবং সেই সিদ্ধান্তের পরই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। কারণ অভিনন্দনকে ফেরানোর সিদ্ধান্তের পর ভারত কিছুটা নরম অবস্থান নেয়।

ঠিক কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল?

অভিনন্দনের ওই ভিডিও দেখার পরই ভারতীয় কূটনৈতিক এবং সামরিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। নয়াদিল্লি সরাসরি হুমকি দেয়, পাকিস্তানের মাটিতে ৬টি মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হবে। তবে কী ধরনের মিসাইল বা কোথায় সেগুলি ফেলা হবে, সেটা তখন স্পষ্ট করা হয়নি। এই খবর পেয়ে পাকিস্তানও পাল্টা হুঙ্কার ছাড়ে, ভারত একটা মিসাইল ফেললে তারা তিনটি ফেলবে। এই উত্তেজনার আঁচ পেয়েই দ্রুত হস্তক্ষেপ করে আমেরিকা। উত্তেজনা এতটাই চরমে ছিল যে দুই চিরশত্রু দেশকে নিরস্ত করতে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে মাঠে নামতে হয়।

আগের ঘটনাক্রম

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমা ফেলে আসে ভারতীয় বিমানবাহিনী। পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আকাশসীমায় ঢোকে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। সেই সময়ই মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে পাক যুদ্ধবিমানগুলিকে তাড়া করেন অভিনন্দন এবং শুরু হয় ‘ডগফাইট’। পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ ধ্বংসের পর অভিনন্দনের যুদ্ধবিমানও ধ্বংস হয় এবং তিনি অবতরণের পর পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দি হন। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানি সেনাদের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অভিনন্দনের চোখ বাঁধা। হাতও পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে। এই ছবি দেখার পরই ভারতীয় গোয়েন্দা এবং সামরিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লির সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টার্সের দাবি, ওই ভিডিও দেখেই ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ‘সিকিওর লাইনে’ সরাসরি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান আসিম মুনিরকে ফোন করেন। তিনি পাকিস্তানকে জানিয়ে দেন, অভিনন্দনকে তারা আটক করলেও পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাস দমনে ভারত পিছপা হবে না। পাকিস্তানের মাটিতে যে সব জঙ্গিরা খোলাখুলি ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কিছুতেই ছাড় দেবে না ভারত। সেই সময়ই ৬টি মিসাইল হামলা চালানোর কথাও জানতে পারেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

এরপর কী হয়েছিল?

রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকারের এক মন্ত্রী এবং এক পশ্চিমা কূটনৈতিক আলাদাভাবে নিশ্চিত করেন যে, ওই সময়ই ভারত অন্তত ৬টি মিসাইল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে টার্গেট করে রেখেছিল। পাকিস্তানের ওই মন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে যোগাযোগ করেছিল।

নাম প্রকাশে ওই মন্ত্রীর দাবি, ইসলামাবাদও ভারতকে পাল্টা বলেছিল, ‘আপনারা একটা মিসাইল ছুড়লে আমরা তিনটি ছুড়ব। ভারত যাই করবে, আমরা তার তিন গুণ প্রত্যাঘাত করব।’ তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত আছে। আইএসআই প্রধান আসিম মুনিরও রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

অভিনন্দন কি ইমরানের দয়াতেই মুক্তি পেয়েছেন?

রয়টার্স দাবি করেছে, শুধু ইমরান খানের মহানুভবতার জন্যই অভিনন্দন বর্তমান ভারতে ফেরত আসেনি। দুই দেশের উত্তেজনা থামাতে এক ঝাঁক কুটনীতিক মাঠে নামিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। আর এই কারণেই চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। অভিনন্দনের যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল, তা জেনেভা কনভেনশনের পুরোপুরি বিরোধী। যুদ্ধবন্দির সঙ্গে এমন আচরণ করায় পাকিস্তান তীব্র চাপে পড়ে যায়। পরে চা খেতে খেতে অভিনন্দনের আরেকটি ভিডিও ছাড়া হয়। এবং শেষ পর্যন্ত অভিনন্দনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।

আন্তর্জাতিক