নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের দুই জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভুঁইয়া জানান, নিহতরা হলেন- স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ। সানজিদা আকতার। আর অন্যজন হলেন হোসনে আরা পারভীন।
শফিকুর রহমান আরও জানান, মসজিদে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন (অন্তত ৮জন) বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে নিহত সানজিদা আকতার ড. আবদুস সামাদের স্ত্রী। তবে সামাদের বড় ছেলে তোহান মোহাম্মদ গণমাধ্যমকে জানান, তার মায়ের নাম কেশোয়ারা সুলতানা। তিনি ভালো আছেন। তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। ফলে সানজিদা আকতারের পরিচয় নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে নিহত পারভীন একজন গৃহবধূ। তার বাবার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গাল হাটা গ্রামে। আর তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার চকগ্রামে। এই দম্পতি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বসবাস করতেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, পারভীন ও ফরিদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তারা সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
নিহত পারভীনের ভাগ্নে মাহফুজ চৌধুরী বলেন, ফরিদ উদ্দিনকে নিয়ে মসজিদে যান পারভীন। তার স্বামী প্যারালাইসিসের রোগী ছিলেন। ঘটনার দিন শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজ ছিল। তাই নামাজের আধঘণ্টা আগে ফরিদ উদ্দিন আহমদকে নিয়ে মসজিদে যান তিনি।
মাহফুজ চৌধুরী আরো বলেন, স্বামীকে মসজিদে রেখে নারীদের মসজিদে চলে যান পারভীন। এর কিছু পর পর পুরুষদের মসজিদে গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। দ্রুত স্বামীকে দেখতে ছুটে যান। কিন্তু এটাই তার জন্য হয়ে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। কারণ এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যান পারভীন।
এদিকে নিহত ড. আব্দুস সামাদের বাংলাদেশে বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায়। তিনি নাগেশ্বরী মধুরহাইল্যা গ্রামের জামাল উদ্দিন সরকারের বড় ছেলে।
আব্দুস সামাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে নাগরিকত্ব নিয়ে স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে চলে যান। সেখানে তিনি লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। পাশাপাশি তিনি ‘মসজিদে নূর’-এ মোয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় তিনি মারা যান বলে খবর পাওয়া যায়।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আল নূর মসজিদে ৪১ জন মারা যান। অপরদিকে লিনউড মসজিদে নিহত হন ৭ জন। আর হাসপাতালে মারা যান আরও একজন।