মানবপাচার বন্ধে সরকার বদ্ধপরিকর। অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে দুর্বলতা থাকার কারণে মানবপাচার হয়। এটি বন্ধ করতে সরকার আইন করেছে। এই আইন বাস্তবায়ন করা হলে মানবপাচার রোধ করা সম্ভব হবে।
শনিবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় পরিকল্পনা (২০১২-১৪) উপস্থাপন বিষয়ক সংলাপে বক্তরা একথা বলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে ইউএসএআইডি ও উইন রক নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
সংলাপের বক্তা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভারতের জনসংখ্যা ১১৭ কোটি। তাদের বছরে ছয় লাখের মতো লোক বিদেশে পাঠাচ্ছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। আমরাও ছয় লাখের মতো লোক বিদেশে পাঠাচ্ছি। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যায়, তাদের একটি বড় অংশ দালালদের মাধ্যমে যায়। দালালদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অভিবাসন ব্যয় কমবে না। এটা না কমলে একজন শ্রমিক খরচের টাকা তুলতে গিয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে অবৈধ হয়ে পড়বে।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি চার মাসে বাংলাদেশে থেকে তিন লক্ষাধিক লোক বিদেশে যাচ্ছেন। তার জন্য আমরা গ্রামে-গঞ্জে বৈধ এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রেখেছি। বিদেশে যেতে হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ নিবন্ধন খরচ মাত্র ৮০ টাকা। নিবন্ধন করে বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার সময় তাদের একটি স্মার্ট কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে, যাতে করে তাদের পাচারসংক্রান্ত কোনো জটিলাতার সম্মুখীন হতে না হয়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, ‘মানবপাচার একটি জঘন্য অপরাধ। নারীদের পাচার করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করাতে বাধ্য করছে। বিদেশে গিয়ে তাদের দাসত্ব বরণ করতে হচ্ছে, এমনকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। পাচার যেন বন্ধ হয়ে যায়, এ জন্য সরকার মানবপাচার আইন করেছে। তবে শুধু আইন করলেই হবে না, আইন বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘পাচার বন্ধের জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যত আইন আছে, বাংলাদেশ এসব আইনের অংশীদার। আমরা এসব আইন বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে যেসব দুর্বলতা আছে, সেগুলো সমন্বিতভাবে দূর করার জন্য কাজ করছি।’ দূতাবাসগুলোকে শক্তিশালী করার কাজ করা হচ্ছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবপাচার বন্ধে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ থেকে পাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাক।’ এজন্য যে ধরনের সহযোগিতা দরকার যুক্তরাষ্ট্র তা দেবে বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ‘পাচার হওয়া মানুষদের দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের পুনর্বাসনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তরিকুল ইসলাম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশেনের মাধ্যমে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।