বহুতল ভবনসহ আরো ৫৭ স্থাপনা উচ্ছেদ

বহুতল ভবনসহ আরো ৫৭ স্থাপনা উচ্ছেদ

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে তুরাগ নদ। রাজধানীর কোলঘেঁষে বয়ে চলা এই নদের এপারে ঢাকা উদ্যান, ওপারে সাভারের বড়দেশী। সেখানে তীর দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিয়দংশে চলছে নতুন আবাসন গড়ার ভরাটকাজ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) গতকাল বুধবার তুরাগের দুই তীরে চালিয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দখলি জমিতে নির্মাণ করা অর্ধশতাধিক স্থাপনা।

সকাল ৯টার পর থেকে তুরাগতীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডাব্লিউটিএ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুলডোজার ও নৌযান নিয়ে ঘুরে ঘুরে দিনভর চলে কার্যক্রম। কখনো এপারে, কখনো ওপারে চলে উচ্ছেদ। সাভারের বড়দেশী গ্রামে তুরাগ ঘেঁষে গড়ে উঠছে নতুন আবাসন। সেখানে জমি ভরাটের পাশাপাশি গাছপালা লাগিয়ে আবাসিক এলাকার রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে নির্মাণসামগ্রী রেখে ও প্রাচীর তৈরি করে কয়েকটি আবাসন কম্পানি দখলে নিয়েছে তুরাগতীরের কিছু অংশ। কোথাও কোথাও সীমানাপ্রাচীরও গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকা প্রান্তে তুরাগ হাউজিং, সাভার প্রান্তে সিলিকন সিটি হাউজিং ও আকাশ নীলা ওয়েস্টার্ন সিটি হাউজিংয়ের অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরের দখলি জায়গা উদ্ধারে অভিযান চলছে। কোথাও আইনি বাধা থাকলে সে ক্ষেত্রে স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে না। তবে বেশির ভাগ স্থানে দখলবাজরা কৌশলে নদীর জায়গায় ঘরবাড়ি তৈরি করছে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। সেগুলো আগেই জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গতকাল উচ্ছেদ অভিযানকালে ভাঙা হয়েছে ৫৭টি স্থাপনা। এর মধ্যে একটি চারতলা, একটি তিনতলা, একটি দোতলা ও ১৩টি একতলা ভবন রয়েছে। এ ছাড়া ১০টি আধাপাকা ঘর ও ৩১টি সীমানাপ্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দিনভর অভিযানে নদীতীরের সাড়ে আট একর জায়গাও উদ্ধার হয়েছে।

বিআইডাব্লিউটিএ পরিচালিত সর্বশেষ ১৭ কর্মদিবসের উচ্ছেদ অভিযানে মোট ১৯ হাজার ৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদপুর থানার ঢাকা উদ্যান ও রামচন্দ্রপুর এলাকা এবং বিপরীত পাশে সাভার থানার বড়দেশী মৌজায় তুরাগ নদের তীরবর্তী সিলিকন সিটি হাউজিং, আকাশ নীলা ওয়েস্টার্ন সিটি লিমিটেড, অনির্বাণ ও তুরাগ হাউজিং এলাকায় অভিযান চালানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর এলাকা এবং তুরাগ নদের বিপরীত পাশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।

সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা যায়, দুপুরে আকস্মিক বুলডোজার ও নৌযান নিয়ে ঢাকা উদ্যান প্রান্তে হাজির হন উচ্ছেদ অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেখানে সাবেক কাউন্সিলর সাঈদ বেপারীর মালিকানাধীন একটি চারতলা ভবনের একাংশ ভাঙা হয়েছিল আগের দিন। ভবনটিতে ডিলাক্স অ্যাপারেল নামে একটি গার্মেন্ট রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান শুরু হলে সেখানে হাজির হন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভবনটি ভাড়া নেওয়া। এর কতটুকু দখলি জমিতে সেটি জানা ছিল না।’ সময় দিলে নিজেই গার্মেন্ট বন্ধ রেখে তিনি দখলি অংশ ভেঙে ফেলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি অন্তত তিন দিন সময় চান।

উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে তুরাগের দুই তীরে শত শত মানুষ উপস্থিত ছিল। দখলদারদের প্রতিনিধি সন্দেহ করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে তারা কেউই দখলদারদের লোক নয় বলে দাবি করে। তারা উচ্ছেদ কার্যক্রম ও নদীর তীর উদ্ধারের প্রশংসা করে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর