বিদেশি মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ২০০ কোটি টাকার ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের (ভিএএস) বাজার।
সম্প্রতি দেশের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের খসড়া গাইডলাইন তৈরি করেছে। এতে অপারেটরদের হাতে ভিএএস রাখা হয়নি।
মোবাইল ফোন অপারেটর ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই গাইডলাইন চূড়ান্ত হলে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের (ভিএএস) বাজার পুরোটাই হাত ছাড়া হয়ে যাবে মোবাইল অপারেটরদের হাত থেকে। খসড়া গাইডলাইন অনুযায়ী মোবাইল ফোন অপারেটরেরা এই লাইসেন্স পাবে না।
দিনকে দিন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের (ভিএএস) বাজার বাড়ছে। টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচিরেই ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের বাজার দ্বিগুণ হচ্ছে।
এদিকে বিটিআরসি বলছে, দিনে দিনে বিদেশি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর দাপটে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতেই এই গাইডলাইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ কবে। যার মাধ্যমে দেশ উপকৃত হবে।
চেয়ারম্য্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বলেছেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তরুণেরা এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কনটেন্ট প্রভাইডার অ্যান্ড এগ্রিগেটেড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই গাইডলাইন চূড়ান্ত হলে বাংলদেশের স্বার্থ রক্ষা হবে।’
তবে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও মোবাইল অপারেটরেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে এতে হিতে বিপরীত হবে। সেই সঙ্গে আগামীতে থ্রিজির মতো প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন ও আফ্রিকার ইথিওপিয়া ছাড়া বিশ্বের কোথাও ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের জন্য কোনো পৃথক লাইসেন্স দেওয়া হয় না।
এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব ইউমেনের (এআইডাব্লিউ) শিক্ষক ড. ফাহিম হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস নিয়ে কথা বলার এখনই সময়। খসড়া গাইডলাইন অনুযায়ী মোবাইল অপারেটরেরা এই লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া অংশ নিতে পারবে না। এটি থ্রিজির বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তার মতে থ্রিজি সার্ভিসটি পুরোপুরিই ডেটা বা তথ্য নির্ভর। এই সুবিধা যদি মোবাইল অপারেটরেরা না পান সেক্ষেত্রে থ্রিজির জন্য শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ কেউ করবে না। তাই নতুন গাইডলাইন বাজারে ভালো সংকেত দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে আরও সংলাপের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এত লাইসেন্স ও এত নীতিমালা দরকার নেই। তবে এ নিয়ে এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় মোবাইল অপারেটর ও দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সবাই যাতে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন সৈয়দ তাহমীদ আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, থ্রিজির প্রধান উদ্দেশ্যেই হলো ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস অগ্রগতি সাধন করা। এক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস যদি থ্রিজি থেকে পৃথক করা হয় তাহলে এটা গুরুত্ব হারাবে। এতে টেলিযোগাযোগ খাতের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে বাংলালিংকের হেড অব মার্কেটিং শিহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের লাইসেন্সিংয়ের জন্য মোবাইল অপারেটর ও দেশীয় উদ্যোক্তা উভয়েরই অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। নতুবা ভবিষ্যতে থ্রিজির মতো সেবায় অপারেটরদের জন্য বড় বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। এতে করে মোবাইল অপারেটরেরা অনেক সার্ভিস নিয়ে নিয়ে আসতে পারবে না।