যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি আর্থিক সেক্টর ব্রেক্সিটের জন্য বেশ কিছুদিন থেকেই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ও স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূলধন ইউরোপের অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করছে। ব্যাংক সেক্টরে সম্পদ স্থানান্তরে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে জার্মানির অর্থনৈতিক রাজধানী ফ্রাঙ্কফুর্ট।
লন্ডনের অর্থনৈতিক বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউ ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান উইলিয়াম রাইট স্থানীয় সময় গত সোমবার এ কথা জানিয়েছেন। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউ ফাইন্যান্সিয়াল ২০১৪ সাল থেকে সারা বিশ্বের অর্থনীতি, লগ্নি ও মূলধন বিষয়ক নানা বিষয়ে গবেষণা ও গবেষণা বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
নিউ ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান উইলিয়াম রাইট আরও বলেছেন, ব্রেক্সিটের কারণে ইউরোপের আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত ব্রিটেনের প্রভাবকে হ্রাস করবে। শিল্প খাত থেকে রাজস্ব আয় কমবে। নিউ ফাইন্যান্সিয়াল থিংক ট্যাংকের মতে, ব্রেক্সিটের কারণে ২৭৫ টিরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজার থেকে ১২০ কোটি ডলার মূলধন নিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে চলে যাবে।
লন্ডনে অবস্থিত প্রধান ১০টি ব্যাংক এবং বিনিয়োগ ব্যাংক ৮০ হাজার কোটি (৮০০ বিলিয়ন) পাউন্ড ইইউভুক্ত দেশগুলোতে পাঠাবে। এটি দেশটির মোট সম্পদের ১০ শতাংশ।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ২৫০ এর মতো প্রতিষ্ঠান ইউরোপেই অন্যত্র তাদের সদরদপ্তর স্থাপন করেছে। ২১০টি প্রতিষ্ঠান বৈধ আইনি প্রক্রিয়াই অন্যত্র চলে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে। নতুন ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। এসব স্থানান্তর প্রক্রিয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫ হাজার কর্মচারীকে তাদের নতুন সদর দপ্তরস্থলে যেতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোতে ১০০টি প্রতিষ্ঠান আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন, ৬০টি লুক্সেমবুর্গে, ৪১টি প্যারিসে, ৪০টি ফ্রাঙ্কফুটে আর কিছু প্রতিষ্ঠান আমস্টারডামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার আবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আর ১৭ দিন পর আগামী ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা। তবে দফায় দফায় বৈঠক করেও ইইউ ও যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবার ভোটাভুটির আগে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট চুক্তি বিষয়ে নতুন কোন সমাধান খুঁজতে স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় স্ট্রাসবুর্গে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি জঁ ক্লদ জাঙ্কারের সঙ্গে দেখা করবেন।
সোমবার গভীর রাতে উভয় পক্ষ ইইউ সদস্য আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্থল সীমান্তে তথাকথিত ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছেন। সর্বশেষ সমঝোতা অনুযায়ী ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা বহাল থাকবে ২০২০ সাল পর্যন্ত।
অচলাবস্থা কাটাতে যুক্তরাজ্যের অনেক মহল ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর কথা বলেছিল। যুক্তরাজ্য শেষ পর্যন্ত তাতে রাজি হলেও ইইউর সব সদস্য দেশকে সম্মতি জানাতে হবে ৷ এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি ইইউ ছাড়ার প্রশ্নে আবার ভোটাভুটির দাবি করছেন।