দেশে ভেষজ ওষুধের বাজার ২০২০ সাল নাগাদ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে এ ওষুধের বাজার এক হাজার কোটি টাকা।
শনিবার এক কর্মশালায় এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভেষজ ওষুধের বাজার দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ভেষজ ওষুধ বিক্রির পরিমাণ ছিলো ১ কোটি টাকা। ২০১০ সালে তা বেড়ে ১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
তারা আরো বলেন, এ শিল্পখাতের কার্যকর প্রসার ঘটিয়ে দেশে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পাশাপাশি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ঔষধি গাছের ব্যবহার’ শীর্ষক কর্মশালায় তারা এ কথা বলেন।
মেডিসিনাল প্লান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এমপিএইচপি-বিপিসি) এর সহায়তায় বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্প সমিতি এ কর্মশালার আয়োজন করে।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্প সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. সেলিম মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে কর্মশালয় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারবাল মেডিসিন গবেষক আবদুস সবুর খান। এতে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ইউনানী অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও হামদর্দের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকিম ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য ও এপি গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ও বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি ডিএস সরকার বক্তব্য রাখেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত প্রাকৃতিক ওষুধের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মহাজোট সরকার এরইমধ্যে ভেষজ ওষুধ উৎপাদনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কৃষিভিত্তিক ও আমাদানি বিকল্প শিল্প হিসেবে সরকার ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্পের প্রসারে সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে।’
তিনি গ্রাম পর্যায়ে গরিব জনগণকে নিরাপদ চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশংসা করেন।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘যুগের চাহিদা অনুযায়ী আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি শিল্পকে আধুনিক শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হবে।’
তিনি দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ভেষজ বৃক্ষের সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে ওষুধ শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।
এ শিল্পের প্রসার গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও জনগণের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চায়তা দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কর্মশালায় এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ২১০টি আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান ২৭২ প্রকারের ওষুধ তৈরি করছে। দেশে প্রায় এক হাজার প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৪শ’ ভেষজ উদ্ভিদ বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।
তারা অধিকহারে ভেষজ উদ্ভিদ রোপণের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় এগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। তারা ভেষজ ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে জন্য গবেষণা জোরদারের পাশাপশি এ শিল্পে সরকারে নীতি সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দেন।