ভারত পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধ হলে প্রাণ ও প্রকৃতির ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞ হবে তাতে ২০০ কোটি মানুষ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, খরা ও খাদ্যাভাবের প্রভাবে প্রাণ হারাতে পারে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম এক্সপ্রেস. ডট. ইউকে ২০১৩ সালের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা থামছেই না। গতকাল বুধবারও দেশ দুটির সীমান্তে গুলি বিনিময় হয়েছে। উত্তেজনার মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের আশংকা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের একটি সাবমেরিন পাকিস্তানের আটকে দেওয়ার খবরে এই যুদ্ধের আশংকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের ওই গণমাধ্যম।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট দেবেন্দ্র আনন্দ জানান, বুধবার ভোর থেকে গুলি ও মর্টার ছুঁড়ে পাকিস্তান সেনারা। বেলা বাড়তেই হামলার বেগ বাড়ে। ভারতীয় সেনারাও যোগ্য জবাব দিয়েছে। মঙ্গলবার নৌশেরা ও পুঞ্চের কৃষ্ণঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছোঁড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওইদিন রাজৌরিতে এক সেনা আহত হন। যদিও গতকালের হামলার ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
মঙ্গলবার পাকিস্তান দাবি করে, সোমবার রাতে ভারতের একটি সাবমেরিন তাদের জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সফলভাবে সেটি আটকে দিতে সক্ষম হয়। তবে ভারত জানায়, পাকিস্তান নাটক সাজিয়েছে। তাদের প্রচারিত ভিডিওটিও ভুয়া। ২০১৬ সালের ভিডিও সম্পাদনা করে নতুন ভিডিওটি তৈরি। এর কয়েকদিন আগে দুই দেশ একে অপরের যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ভারতের এক পাইলটকে পাকিস্তান মুক্তি দেওয়ায় শান্তির আশা জেগেছিল। ৪ মার্চ সাবমেরিন ঘটনার পর ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম এক্সপ্রেস. ডট. ইউকে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধও বেধে যেতে পারে।
অ্যাক্সিওজ নামের ওয়েবসাইট বলছে, ভারতে সামনে লোকসভা নির্বাচন। আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অপরীক্ষিত। ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা আছে। বিশ্বে প্রভাবশালী দেশ এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে। তবে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ পরমাণু যুদ্ধের আশংকা নাকচ করে দিয়েছেন আগেই। পরমাণু যুদ্ধ বাঁধলে পাকিস্তানের জয় নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং সৌদি আরব যুদ্ধ এড়াতে দুই দেশের ওপরই চাপ তৈরি করছে
গত কয়েকদিন ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তব্যে ফের হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একবার হামলা করেই আমরা ক্ষান্ত হবো, এটা মনে করার যুক্তি নেই। সন্ত্রাস হলে প্রয়োজনে সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে হামলা চালাবো। এমনকি ভারতের সামরিক কর্মকর্তাদের মুখেও ফের হামলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পাকিস্তানও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হামলা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
সুইডেন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ১৩০ থেকে ১৪০টি ওয়ারহেড বা পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের অস্ত্রভিত্তিক প্লুটোনিয়াম তালিকা এবং পারমাণবিক নিক্ষেপ প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে এই তালিকা তৈরি করেছে। এছাড়া ইউরেনিয়াম উত্পাদনে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। পাকিস্তানও পারমাণবিক অস্ত্র উত্পাদন এবং উেক্ষপণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ১৪০-১৫০টি ওয়ারহেড রয়েছে বলে হিসেব পাওয়া যায়। আসছে দশকে তা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
এই দুই দেশের হাতে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে তা দিয়ে পৃথিবীকে কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিষদ ভবিষ্যদ্বানী করেছিলো ২০২৮ সালের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধ হতে পারে।