তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সৌদি আরব। সেজন্য নানা ধরনের সেবা-পণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে দেশটি। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় তারা। যার অংক বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।
মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় দেশটির এ বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌদির প্রতিনিধি দলের সংলাপ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
সংলাপে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, সৌদি আরবের দুই মন্ত্রীসহ ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি।
সংলাপে আলাদা বক্তব্যে উঠে আসে, সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, উড়োজাহাজকে গুরুত্ব দিয়ে ১৬ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সৌদি আরব ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাতির পিতার হাত ধরেই সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করেছিলেন। তার ফল আসতে শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে সব সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। চলতি বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি। ভৌগোলিক অবস্থান এদেশকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধাও আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে।
দেশের জনশক্তির বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ১৬৩ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই কর্মক্ষম। এই কর্মক্ষম মানুষদের আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধশিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে সৌদি আরব।