সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রকৌশলীদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজের মান বজায় রেখে এবং পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি যত্নশীল থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনসমূহ গ্রহণের জন্য তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের গুরুভার আপনাদেরই (প্রকৌশলীদের)। কাজেই আমি চাইব, আপনারা পরিবেশ এবং কাজের গুণগত মান বজায় রাখার বিষয়টি মাথায় রেখেই যে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (আইইবি) আইইবি’র ৫৯তম কনভেনশনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
কনভেনশনে দেশের প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনা এবং মিতব্যয়ী হয়ে সব সময় উন্নয়ন পরিকল্পনা করার জন্য প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের জলবায়ু, ভৌগলিক অবস্থান, আমাদের মাটি-পানি সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে মাটি ও মানুষের কথা ভেবে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
যেভাবে খুব মিতব্যয়ী হয়ে, চাষের জমি অপচায় না করে, স্বল্প খরচে সর্বোচ্চ উন্নতি দেশের জন্য যা করতে পারা যায়- সেই কথা সব সময় চিন্তা করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী আব্দুর সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ ও ঢাকা কেন্দ্রের সভাপতি প্রকৌশলী মো. ওয়ালিউল্লাহ সিকদার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ঢাকা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন শিপলু ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী তিনজন প্রকৌশলীকে আইইবি স্বর্ণপদক ২০১৮ তে ভূষিত করেন। স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হচ্ছেন- প্রকৌশলী দিপক কান্তি দাস, প্রকৌশলী মো. কবির আহমেদ ভূইয়া এবং মরহুম প্রকৌশলী মো. খিজির খান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ কৃতিত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা কেন্দ্র, শ্রেষ্ঠ উপকেন্দ্র হিসেবে পানা উপকেন্দ্র, আইবি শ্রেষ্ঠ ওভারসীজ চ্যাপ্টার হিসেবে অষ্ট্রেলিয়া এবং শ্রেষ্ঠ প্রকৌশল বিভাগ হিসেবে আইইবি’র কম্পিউটার কৌশল বিভাগকে পুরস্কৃত করেন।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, গবেষণার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আমাদের দেশের মাটি, মানুষ, জলবায়ু, আবহাওয়া সব কিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিভাবে আমরা উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের নিজেদেরই কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭০ বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। স্বাধীনতার পরে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন জাতির পিতা গড়ে তুলছিলেন সেই সময় মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে তিনি আমাদেরই প্রকৌশলীবৃন্দের সহায়তায় এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ তিনি গড়ে তোলেন। যুদ্ধের ভয়াবহতায় সেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা থেকে শুরু করে সমগ্র বাংলাদেশ তখন একটি ধবংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু জাতির পিতার নেতৃত্বে অত্যন্ত দ্রুত তখন আমাদের প্রকৌশলীরা দেশের এই অবকাঠামোতে পুনর্গঠন করেন। আর এখনো বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রকৌশলীবৃন্দ সার্বিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
প্রকৌশলীদের কল্যাণে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের এই ভবন যে জায়গাটায় সেখানকার প্রায় ১০ বিঘা জমি তার সরকার ইনস্টিটিউশনকে প্রতীকী মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়। শুধু তাই নয়, এই ভবন তৈরির টাকাও সরকার দিয়েছে।
প্রকৌশলীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সেসব অত্যন্ত মনযোগ সহকারে শুনেছেন এবং যার অনেকগুলো তিনি ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছেন এবং অনেকগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছেন। একইসঙ্গে প্রকৌশলীদের ৭টি পদ যেগুলো আগে গ্রেড ওয়ান পদ ছিল না সেগুলোকে গ্রেড ওয়ানে উন্নীত করে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি জলাধার সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের জলাধার রক্ষা করা দরকার। রাস্তা বা কোনো স্থাপনা নির্মাণের সময় এটি খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা শহরে খাল-পুকুর এখন পাওয়া যায় না। আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায় না। চকবাজারের অগ্নিকান্ডে জেলখানার পুকুর থেকে পানি সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন নতুন গবেষণার ফলে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধান, শাক-সবজি চাষ হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়েও আমরা বাইরে রফতানি করতে পারছি। এ কারণে ভবিষ্যতে আমরা কৃষিজাত শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ পৃথিবী যতদিন থাকবে খাদ্যেরও ততদিন প্রয়োজন আছে। খাদ্যের চাহিদা কোনো দিন ফুরাবে না।
তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনের রাস্তার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে দ্রুতগামী রেল যোগযোগ (বুলেট ট্রেন) স্থাপন এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অবদি সরাসরি রেল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায়ও তার সরকার উদ্যোগ নেবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী