জাতিসংঘে চলমান অভিবাসন সপ্তাহে যোগদান উপলক্ষে নিউ ইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে ওআইসি’র রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের সভায় ব্রিফিং করেন এবং ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউট-এ একটি সংলাপে অংশ নেন। উভয় অনুষ্ঠানেই এ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ও সহায়ক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
গতকাল শুক্রবার নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠান দুটিতে পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সংকটের অতীত ও বর্তমান অবস্থা বিস্তারিত তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র সচিবের ব্রিফিং-এ উঠে আসে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সৃষ্ট সাম্প্রতিক সংঘাত এবং নতুন করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, এই সংকটের অন্তঃর্নিহিত কারণ, সহিংসতার দায়বদ্ধতা নিরূপন, অপরাধ করে পার না পাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ, এ জাতীয় গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত অসামরিক সেফ জোন সৃষ্টি, এ সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের উপর সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রত্যাশার বিষয়গুলো।
ওআইসি’র সভায় প্রদত্ত ব্রিফিং-এ পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসির ৪৫তম ‘কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার’ এর সভায় মিয়ানমারে সৃষ্ট গণহত্যা ও সহিংসতাকে ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন এর আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করার ব্যবস্থা গ্রহণে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কথা উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গা সংকটের ফলে বাংলাদেশে কি ধরণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে এমন এক প্রশ্নে উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আশ্রয় ক্যাম্প আমাদের সংরক্ষিত বন ও বণ্য প্রাণী ধ্বংস করছে, এরফলে পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে। আমাদের একমাত্র সমুদ্র ক্সসকত সৌন্দর্য ও পর্যটক হারাচ্ছে; আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং ঐ অঞ্চলের সামাজিক বিন্যাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।”
রোহিঙ্গা সংকটের করণীয় বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জনাব হক বলেন, “আমরা দ্বি-পাক্ষিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি। আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের সহায়তা চাচ্ছি। ওআইসি এ বিষয়ে কাজ করছে। আর জাতিসংঘ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহে বিষয়টির সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা ও আলোচনা অব্যাহত রাখার সকল প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওআইসির রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের সভাটি সঞ্চালন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউট-এর অংশগ্রহণমূলক সংলাপ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি ড. অ্যাডাম লুপেল।