লাদেনের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছেলে সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যায়

আল কায়েদার ভবিষ্যত নেতা ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজা বিন লাদেন সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের একজন ‘প্রধান নেতা’ হয়ে উঠছেন- এমন ধারণা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজা বিন লাদেনের বিষয়ে যতোটা জানা গেছে তার শৈশবের কোন ছবিতে পারিবারিক ছুটি কাটানোর কোন মুহূর্ত নেই।

এর পরিবর্তে, হামজা বিন লাদেনকে অল্প বয়স থেকেই, সামরিক পোশাক পরা আর হাতে আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল পরিচালনা করতে দেখা যায়। ব্যাপারটা এমন, যেন সেটি কোন খেলনা। আল-কায়েদার প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেনের এই ছেলেকে অনেক অল্প বয়সেই তার বাবার জিহাদি ধারণা যেটাকে কিনা তারা পবিত্র যুদ্ধ হিসেবে মনে করতো সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০০৫ সালে আল-কায়েদার প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আফগানিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণে অংশগ্রহণকারী জঙ্গিদের মাঝে লাদেনের ছেলেও উপস্থিত ছিলেন। তখন হামজার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। হামজার বয়স যখন মাত্র ১০ বছর তখন থেকেই তিনি আল-কায়েদার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র হামজার মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তার অবস্থানগত তথ্য সরবরাহের জন্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অর্থ পুরস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। তারা এখন বলছে যে, হামজা আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের ‘প্রধান নেতা’ হিসাবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। কিন্তু হামজা বিন লাদেন সম্পর্কে কী কী তথ্য জানা গেছে? ‘ইউনাইটেড স্টেটস অফ জিহাদ’ বইটির লেখক পিটার বার্জেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, হামজার বাবা তাকে অল্প বয়সেই আল কায়েদার মতাদর্শের হাতেখড়ি দেন।

ওই বয়সেই সামগ্রিক জিহাদি বার্তার ব্যাপারে খুব বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন হামজা। এ কারণে হামজাকে সত্যিকারের বিশ্বাসী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার ঘটনার পর, ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

লন্ডন ভিত্তিক আল-শারক আল-আওসাত পত্রিকার মতে, ওই হামলার পরের বছর, হামজার লেখা কয়েকটি কবিতা ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। সেখানে হামজা, তিনি এবং তার পরিবারের বাস্তুচ্যুত হওয়া থেকে শুরু করে নানা বিপদের বর্ণনা দেন।

ওসামা বিন লাদেনের বয়স হওয়ার সাথে সাথে হামজা নিজেকে আল-কায়েদার কর্মকাণ্ডে আরও বেশি জড়িয়ে নেন। সে সময় তার ব্যাপারে অনেক ধরণের গুজব সামনে আসে। বিশেষ করে ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর গোপন অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহতের ঘটনা ঘিরে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, মার্কিন অভিযানে হামজা নিহত হয়েছেন। তবে পরে এটি নিশ্চিত করা হয় যে ওই অভিযানে হামজা নয়, বিন লাদেনের অন্য ছেলে খালিদ মারা গেছেন। ৮ বছর আগে পাকিস্তানে মার্কিন বাহিনীর অভিযানে বিন লাদেন নিহত হন। যা সে সময়কার প্রতিটি গণমাধ্যমে এই খবরটি প্রধান শিরোনামে উঠে আসে।

২০১৫ সালের আগস্টে হামজা জনসমক্ষে ফিরে আসেন। আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরী এ নিয়ে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি হামজাকে দলের একজন আনুষ্ঠানিক সদস্য হিসেবে এবং ‘ডেরা থেকে বেরিয়ে আসা সিংহ’ হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর হামজা, কাবুল, বাগদাদ এবং গাজায় তার দলের অনুসারীদের যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র অর্থাৎ লন্ডন, প্যারিস ও তেল আবিবের ওপর আক্রমণের আহ্বান জানান।

হামজা বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালাতে বিভিন্ন সময় পুনরায় আহ্বান জানায়। বিশেষ করে জেরুজালেম ইস্যুতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার সময় তিনি জেরুজালেমকে আখ্যা দেন এমন এক কনে যাকে যৌতুক হিসেবে রক্ত দিতে হয়েছে। তখন থেকেই তিনি পশ্চিমা দেশে টনেকড়ের মতো আক্রমণ’এর আহ্বান জানান। সে সময় তিনি তার পিতার মৃত্যুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নেয়ারও অঙ্গীকার করেন।

এছাড়া সৌদি আরবের শাসকদের বিরুদ্ধে এবং ইয়েমেনের মার্কিন সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে আরব উপদ্বীপে আল-কায়েদার সমৃদ্ধ শাখা একিউএপিতে যোগদানের জন্য সৌদির প্রতিও আহ্বান জানান বিন লাদেনের এই ছেলে। ৯/১১ হামলার একজন অন্যতম হাইজ্যাকারের কন্যাকে বিয়ে করেন হামজা। তার ওই বিয়ের কিছু ফুটেজের সন্ধান পায় সিআইএ।

২০১৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ওসামা বিন লাদেনের কম্পিউটারে পাওয়া বেশকিছু নথি প্রকাশ করে। তার মধ্যে হামজার বিয়ের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় হামজা যাকে বিয়ে করেছেন তিনি ৯/১১ হামলার প্রধান হাইজ্যাকার মোহাম্মাদ আত্তার মেয়ে। ধারণা করা হয় যে বিয়ের অনুষ্ঠান ইরানে হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল এমপি প্যাট্রিক মার্সার একবার হামজাকে ‘সন্ত্রাসের মুকুটধারী যুবরাজ’ হিসাবে আখ্যা দেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে ওসামার এই প্রিয় ছেলে, যার বয়স বর্তমানে ২৯ থেকে ৩০ বছর বলে ধারণা করা হয়, তিনি আল-কায়েদাকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং সন্ত্রাসবাদে সক্রিয় হয়ে উঠতে নিজেকে একজন দক্ষ নেতা হিসাবে গড়ে তুলছেন।

আন্তর্জাতিক