ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহল নলগ্রাম, ফলনাপুর ও জোংরায় জোর করে জমি দখল করে বেআইনি স্ট্যাম্প পেপারে দলিল তৈরি করার একটি চক্র ব্যাপক সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।
এ ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার অর্ন্তগত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার মাথাভাঙা মহকুমার শীতলকুচি ব্লক দ্বারা বেষ্টিত।
উল্লেখ্য, শিতলকুচি কেন্দ্রের বিধায়ক রাজ্য সরকারের বনমন্ত্রী হীতেন বর্মন।
সরেজমিনে এ ছিটমহলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, ভারত বা বাংলাদেশের কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখানে এখন সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে ছিট নাগরিক সুরক্ষা কমিটির নামে একদল সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না এ ছিটমহলগুলোর বাসিন্দারা।
যখন দুই দেশের সরকার ছিটমহল সমস্যাকে সমাধানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই এ দালাল চক্র ভারতীয় ভূখণ্ডের সন্ত্রাসী আবুল টায়ারের দলবলের সাহায্যে এখানে কায়েম করেছে সন্ত্রাসের রাজত্ব।
নজীরবিহীন ভাবে এ কমিটি নিজেদের নামে স্ট্যাম্প পেপার তৈরি করে ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের কাছ থেকে জমি বিক্রির দলিল লিখিয়ে নিচ্ছে।
ভারতের অভ্যন্তরে হলেও এ জমির স্বত্ত্ব বাংলাদেশ সরকারের। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের বড়োখাতা, তুষভাণ্ডার ও রংপুর শহরে ভূমি রাজস্ব দফতরে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া হয়ে যাওয়ার কারণে এখন ৩ বছর ধরে যেতে পারেন না বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শুরু হয়েছে অবাধে জমির দলিল বানানোর কাজ সুরক্ষা কমিটির নেতৃত্বে।
এ রকম বেশ কয়েকটি স্ট্যাম্প পেপারে তৈরি করা দলিল আমরা সংগ্রহ করেছি। এ পেপারগুলোর মাথায় লেখা আছে ছিটমহল। ১০, ২০ ও ৫০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারগুলোতে রয়েছে সুরক্ষা কমিটির নামে সিল। স্বাক্ষরদাতা সুরক্ষা কমিটির সভাপতি বিজেন্দ্রনাথ বর্মণ(১৫ মে নলবাড়ির হামলায় অভিযুক্ত ও তৃণমূলের ঘনিষ্ট সমর্থক), সম্পাদক বিন্দেশ্বর বর্মন ও সহসভাপতি আজিজার মিঞার।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এ ছিটমহলগুলোতে জমির দাম বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি ১ থেকে ৩ লাখ রুপি। জমি বিক্রি করতে গেলে তাদের প্রতি ১ হাজার রুপিতে কমিটিকে ট্যাক্স দিতে হয় ১০ থেকে ১৬ রুপি। এ স্ট্যাম্প পেপারগুলো মাথাভাঙা শহরের একটি প্রেস থেকে ছাপিয়ে আনা হয়।
জমির মালিককে ভুল বুঝিয়ে, পরে বলপ্রয়োগ করে জমি লিখিয়ে নেয় তারা। এখানকার মুসলিম জনগণকে সাম্প্রদায়িক উসকানিও দেয় বলে অভিযাগ রয়েছে। এ সময় দুর্বৃ সঙ্গে থাকে সন্ত্রাসী আবুল টায়ার, স্থানীয় খলিসামারি গ্রামপঞ্চায়েতের সুধীর বর্মণ ও ভূপতি বর্মণরা।
এভাবে এখন পর্যন্ত ২৮টি জমির জাল দলিল তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ছিটের বাসিন্দা আবদুল রশিদ।
শিতলকুচির ভূমি রাজস্ব কর্মকর্তা দক্ষিণারঞ্জন নাগ বলেন, এভাবে কোনো সংগঠন স্ট্যাম্প পেপার বানাতে পারে না। জমির দলিলও তৈরি করতে পারে না। এটা বাংলাদেশ সরকারের জমি। এরা করে কী করে?
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, এটা অনৈতিক কাজ। ছিটমহল বিনিময় এগিয়ে আসছে বুঝতে পেরে পয়সা কামানোর নয়া ধান্দা। ভারত-বাংলাদেশের সর্ম্পককে খারাপ করার জন্য একটা চক্র সক্রিয় হয়েছে। অন্য কোনো একটি শক্তি এদের মদত দিচ্ছে, যাতে একটা সমান্তরাল সরকার গঠন করার দাবি তোলা যায়।
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই বিজেন্দ্রনাথ বর্মণের সাফাই, ‘ছিটমহলে কোনো সরকার নেই। এখানকার মানুষ জমি বিক্রি করলে দলিল হয় না। তাই আমরা স্ট্যাম্প পেপার বানিয়ে জমির দলিল তৈরি করে দিচ্ছি।’
আর অনুমতি? এ প্রশ্নের উত্তরে তার সাফ কথা, অনুমতির কোনো প্রশ্নই নেই। কার কাছে অনুমতি নেবো?