আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে সর্বমোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০টি। এর মধ্যে বিচারাধীন ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭টি। বর্তমান সরকার মামলা জট কমানোকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এতথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এসংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন। জবাবে তিনি আরো জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হতে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে।
মন্ত্রী জানান, দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা হলো এজলাস সঙ্কট। এজলাস স্বল্পতা দূর করে সর্বোচ্চ কর্মঘন্টা ব্যবহার করে বিচার কাজে গতিশীলতা আনয়নে সরকার কাজ কর যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৮টি জেলায় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি জেলায় সম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ শেষে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। বাকি ১৪ জেলায় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
আইনমন্ত্রী জানান, সাতটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর অধীন দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। উক্ত ট্রাইব্যুনালসমূহের জন্য ২৪০টি সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃজন করা হয়েছে। এছাড়া সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারাদেশে আরও ৪১টি ট্রাইব্যুনাল সৃজন করেছে। তিনি আরো জানান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ সারা দেশের ফৌজদারী মামলার দীর্ঘসূত্রীতা কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সঙ্কট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়াতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিকল্প বিরোধী নিষ্পত্তির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। জনগণ যাতে এ বিষয়টি গ্রহণ করে যেজন্য ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। আদালতও বিষয়টি উৎসাহিত করছে। ফলে মামলা জট অনেক হ্রাস হবে।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ নারী নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা করলে আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারবে। আর সাক্ষীরা যাতে আদালতে আসতে বাধ্য হয়, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি আইনি সেবা সম্পর্কে সহজে ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে সংস্থা তথ্যচিত্র ও ডকুড্রামা নির্মাণ করা হয়েছে। এটি ইতোমধ্যে বাংলদেশের ৬৪টি জেলা, সকল ইউনিয়ন ও উপজেলায় প্রচারের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি আইনি সেবা বাংলাদেশের বাইরে বিদেশীরাও যেন জানতে পারে এই উদ্দেশ্যে নির্মিত ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ইংরেজি ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মুসলিম পারিবারিক আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন। এটি ব্যক্তিগত আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, পিতৃত্ব, উত্তরাধীকার ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিষয়গুলোর সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনসহ সামাজিক অন্যান্য বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই আইনের মাধ্যমে পারিবারিক এ বিষয়সমূহ যথাযথভাবে আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।