মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল বিদেশি নাগরিক অবদান রেখেছিল তাদের স্বীকৃতিসহ সন্মাননা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ পর্যন্ত ৩২৯ জন বিদেশি নাগরিক এবং ১০টি প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে একজন ব্যক্তিকে স্বাধীনতা সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৭শ’ জনকে স্বীকৃতিসহ সন্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে।
আজ রবিবার বিকেলে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এতথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এসংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন একাত্তরের রণাঙ্গনের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা সন্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া সন্মাননা প্রদান করা হয় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সন্মাননা প্রদানকারীদের মধ্যে শীর্ষে ভারতের ২১৬ জন ব্যক্তি এবং ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরপর সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রের ২৬ জন ও পাকিস্তানের ১৭জন ব্যক্তিকে সন্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, জার্মান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানসহ মোট ২১টি দেশের ৩৩৯ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী স্বপ্রণোদিতভাবে স্বাধীনতাবিরোধীতা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিজামী-মুজাহিদরা সুকৌশলে সেই তালিকা সরিয়ে ফেলেছে। তবে অবশ্যই আমরা রাজাকার-আলবদরদের একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। অবশ্যই তা প্রকাশ করা হবে।
২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ॥ সরকারি দলের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা প্রকাশের চেষ্টা করছি। সেটি না হলেও দ্রুতই তা প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ওইসব তালিকা পর্যালোচনা করে বিশেষ করে ভারতীয় তালিকা,বেসামরিক গেজেট, শহিদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহিদ গেজেট, শহিদ বিজিবি গেজেট, যুদ্ধাহত গেজেট,খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট, সেনাবাহিনী গেজেট, বিমানবাহিনী গেজেট, নৌবাহিনী গেজেট,নৌ কমান্ডো গেজেট,বিজিবি গেজেট, পুলিশ বাহিনী গেজেট, আনসার বাহিনী গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দ সৈনিক গেজেট, বীরঙ্গনা গেজেট, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গেজেট, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী), ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), যুদ্ধাহত (বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ) গেজেট, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর), বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত ও দায়িত্বপালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট, যুদ্ধাহত সেনা গেজেট তালিকা পর্যালোচনা করে এ বছরেরই ২৬ মার্চের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।