দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামছে। আজ বুধবার থেকেই ছুটে আসছে পর্যটকের দল। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণকারী বোঝাই গাড়ির বহর আসছে সাগর পাড়ে। আগামী শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরে অবস্থান করবেন হাজার হাজার পর্যটক। টানা তিন দিনের সরকারি ছুটি উদযাপন করতে আসছেন তারা।
২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় সরকারি ছুটির দিন। ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি। ফলে এই তিনদিন এদেশের প্রায় সব দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। এই সুযোগে পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটন নগরের দিকে ধেয়ে আসছে পর্যটকের দল।
একদিকে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের ভ্রমণে যানবাহনের সংকট এবং অপরদিকে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেলে কক্ষের সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক ভ্রমণকারী সাগর পাড়ের ছোট্ট শহরটিতে জড়ো হচ্ছে বিধায় এখানে এক ভিন্ন রকমের অবস্থা বিরাজ করছে।
সাগর পাড়ের বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে আজ বুধবার খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, বেশ ক’সপ্তাহ আগেই আগাম বুকিং হয়ে গেছে হোটেল কক্ষের। এ কারণে অনেকেরই আশংকা-অনেক ভ্রমণকারীকে থাকার জায়গার অভাবে যানবাহনেই রাত কাটাতে হতে পারে।
বর্তমানে কক্সবাজার শহরে রয়েছে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল। এক রাতে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক একই সময়ে এসব হোটেলগুলোতে অবস্থান করতে পারেন। এতে রাত যাপনে কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। কিন্তু আজ থেকে কক্সবাজারে ভিড় জমাচ্ছেন তারও বেশি পর্যটক।
ফলে বাকি পর্যটকরা কোথায় রাত যাপন করবেন তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। হোটেল-মোটেল মালিক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন-‘একই সময়ে বিপুল সংখ্যক ভ্রমণকারী একই স্থানে জড়ো হতে গিয়ে একটু সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এসব ভ্রমণকারীদের আগমণকে আমরা দেখে থাকি আতিথেয়তার দৃষ্টি নিয়ে।’
এদিকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আগমণের সংবাদে শহরের অসাধু ব্যবসায়ীরাও তৎপর হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, দালালদের দখলে আবাসিক হোটেলের রুম চলে গেছে। ইতিমধ্যে এই দালাল চক্র নিজেদের লোক আসার কথা বলে হোটেলের রুম বুকিং দেয়। চড়া দামে পর্যটকদের কাছে রুম ভাড়া দিতেই দালাল চক্র এই কৌশল নেয়। ফলে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষে নতুন করে রুম বুকিং নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকটি তারকা মানের হোটেল ছাড়া প্রায় সব আবাসিক হোটেলের একই অবস্থা।
সংকট দেখা দিয়েছে পরিবহন ব্যবস্থাতেও। আজ বুধবার রাত থেকেই ঢাকা-কক্সবাজারগামী বিমানসহ এসি, নন-এসি কোনো ধরনের যানবাহনে বাসের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি ছুটি শেষের পর থেকেও কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কোনো বাসেরও টিকেট খালি নেই। পর্যটকরা আগে থেকেই এসব বাসের টিকেট বুকিং দিয়ে রেখেছেন। সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের টিকেটেও দেখা দিয়েছে ঘাটতি।
শ্যামলি পরিবহন লিঃ-এর পরিচালক খোরশেদ আলম শামীম জানিয়েছেন, আজ বুধবার রাতে তাদের পরিবহনের অন্তত ৩০টি বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। ২ সপ্তাহ আগে থেকেই বাসগুলোর টিকেট বুকিং দেয়া হয়। ফলে নতুন করে তাদের পক্ষে টিকেট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্য পরিবহনগুলোর মধ্যে শ্যামলি এনা, গ্রিন লাইন এসি, সেন্টমার্টিন হুন্দাই এসি পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার দুই শতাধিক বাস গতকাল রাতে কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারে কর্মরত পরিবহন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা। এসব বাসের টিকেটও আগে থেকেই বুকিং হয়ে গেছে।
শুধু আবাসিক হোটেল এবং পরিবহন ব্যবস্থায় নয়। পর্যটকদের আগমণের প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারেও। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের চাপের কারণে পর্যটন শহরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দেশের অন্য জেলা শহরের তুলনায় বেশি। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমণ ঘটায় তা আরো বেড়ে যাচ্ছে।
আজ শহরের বাজারগুলোতে দেশি মুরগী প্রতি কেজি ৪৫০ টাকারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাত্র দুই দিন আগেও যার মূল্য ছিল ৩৮০ টাকা। মাংস, মাছ থেকে শুরু করে শাক-সবজির মূল্য পর্যন্ত এখন সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।