‘নিখোঁজ’ হয়ে গেলেন পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়! জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এবং কেন্দ্রের সমালোচনা করে সাসপেন্ড হয়েছিলেন গুয়াহাটির ওই কলেজ শিক্ষিকা। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখেও পড়েন তিনি। গুয়াহাটির আইকন কমার্স কলেজের ইংরাজি বিভাগের শিক্ষিকা পাপড়ি দেবী বিষয়টি নিয়ে যেমন এফআইআর করেছেন, তেমনই তাঁর বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলাও দায়ের হয়েছে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারও করে। পরে অবশ্য জামিন পেয়ে যান পাপড়ি। সোমবার থানায় হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তিনি না যাওয়ায় পুলিশ পাপড়ির বাড়িতে গেলে তাঁর খোঁজ মেলেনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কী লিখেছিলেন ওই কলেজ শিক্ষিকা?
পাপড়ি লিখেছিলেন, ‘এই আক্রমণ কাপুরুষোচিত। কিন্তু কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতীয় সেনারা নারীদের ধর্ষণ করেছে, বাচ্চাদের খুন করেছে, পুরুষদের জবাই করেছে। দেশের সংবাদমাধ্যম নাগাড়ে সেখানকার লোকজনকে খলনায়ক সাজিয়েছে। কর্মফল ভোগ করতেই হবে।’
পরে তিনি আরও লেখেন, ‘গো-মাতা ও রাম মন্দিরের বাইরে অন্য কোনও কিছু নিয়ে মাথা না ঘামানো সরকারের বিরাট গাফিলতির ফল এই জঙ্গি হানা। ওই হামলা প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতার ফেরানোর জন্য আরএসএসের চক্রান্তও হতে পারে।’
এই মন্তব্য নিয়ে জলঘোলার পরে আইকন কলেজ কর্তৃপক্ষ পাপড়িকে সাসপেন্ড করে। তাঁকে শো-কজ নোটিসও দেওয়া হয়েছে। গুয়াহাটি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ পাপড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কলেজের তরফে জানানো হয়েছে, ওই শিক্ষিকার পোস্টগুলি ব্যক্তিগত মতামত হলেও তা দেশের আবেগকে আঘাত করেছে। কর্তৃপক্ষ ওই ধরনের মতামতকে সমর্থন করে না। পরে পাপড়ি বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। তাঁকে হত্যা ও ধর্ষণ-সহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া চলেছে।’ তা নিয়ে তিনিও এফআইআর করেছেন।
পাপড়ির বিরুদ্ধে গুয়াহাটির চাঁদমারি থানা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ ধারা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬ নম্বর ধারায় সুয়ো মটো মামলা দায়ের করেছে। অন্য দিকে, শিলচরের বাসিন্দা শুভাশিস চৌধুরী সদর থানায় ৫০৭, ২৯৪ ধারা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬ নম্বর ধারার অধীনে এফআইআর করেন। চাঁদমারি থানা জানায় পাপড়িকে সরকারিভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঘণ্টাতিনেক জেরা করা হয়। পরে তাঁকে জামিন দিয়ে ফের সোমবার হাজির হতে বলা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু যাননি।
শুধু ওই অধ্যাপকই নন, এমন অনেকেই বিতর্কিত মন্তব্য করে রোষের মুখে পড়েছেন। রবিবার হামলা হয় বনগাঁর এক স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে। কোচবিহারে এক যুবককে রাস্তায় টেনে এনে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। ফেসবুকে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের ছাত্র অর্পণ রক্ষিতকে গ্রেপ্তার করে হাবড়া থানা। রোষের শিকার শিলিগুড়ির অরবিন্দনগরের এক তরুণী এবং কোচবিহারের খাগড়াবাড়ির দুই যুবক ও তাঁদের পরিবারের লোকজন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা