বয়স ২৭ বছর, ৯ হাজার কোটি টাকার মালিক এই বাঙালি তরুণী

বয়স ২৭ বছর, ৯ হাজার কোটি টাকার মালিক এই বাঙালি তরুণী

ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্র ২১ লাখ টাকা নিয়ে। মাত্র চার বছরে তা ফুলেফেঁপে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার আটশ কোটিতে। মাত্র ২৭ বছর বয়সে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন এক বাঙালি তরুণী। তার নাম অঙ্কিতি বসু।

কোনো সংস্থার ব্যবসা শত কোটি মার্কিন ডলার পার হলে, কাল্পনিক জন্তুর নাম অনুসারে ইউনিকর্ন তকমা জোটে। অঙ্কিতির ফ্যাশন ই-কমার্স সংস্থা জিলিঙ্গো ইতোমধ্যেই তা পেয়ে গেছে। তার জেরে কনিষ্ঠতম ভারতীয় নারী নির্বাচিত হলেন অঙ্কিতি, যিনি কোনো ইউনিকর্ন সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও।

বাঙালি পরিবারে জন্ম হলেও, বাংলার বাইরেই বেড়ে ওঠা অঙ্কিতি বসুর। ২০১২ সালে মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অর্থনীতি ও গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। তার পর চাকরি শুরু করেন মার্কিন কনসাল্টিং সংস্থা ম্যাকিনজির মুম্বই শাখায়।

সেখান থেকে যোগ দেন অন্য একটি মার্কিন সংস্থা সেকোয়া ক্যাপিটালসের বেঙ্গালুরু অফিসে। ২৩ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুতেই ২৪ বছর বয়সী ধ্রুব কাপুরের সঙ্গে আলাপ হয় তার। আইআইটি গুয়াহাটি থেকে পড়াশোনা সেরে গেমিং স্টুডিও কিউয়ি আইএনসি-তে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ধ্রুব।

চাকরি ছেড়ে নিজের মতো কিছু করার স্বপ্ন ছিল দু’জনেরই। প্রথমেই ই-কমার্স সাইট খোলার কথা মাথায় আসে তাদের। কিন্তু ভারতে তখন ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো সংস্থা জাঁকিয়ে বসে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠা যাবে না বুঝেছিলেন তারা।

সে কারণে চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। ওই বছরই ব্যাংকক বেড়াতে গিয়ে চোখ খুলে যায় অঙ্কিতির। সেখানকার চতুচক বাজারে ঢুকে স্থানীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক, জুতো, ব্যাগ এবং অ্যাকসেসরিজ ইত্যাদি নজর কাড়ে তার।

ভাষাগত সমস্যা থাকায়, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেগুলো বাইরের লোকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারেন তিনি। তখনই মাথায় আইডিয়া আসে। দেশে ফিরে ধ্রুবের সঙ্গে আলোচনা করেন অঙ্কিতি। চাকরি ছেড়ে ২১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে কাজে লেগে পড়েন তারা।

তবে যাত্রা সহজ ছিল না। মার্কেট রিসার্চ সারতেই প্রায় একবছর লেগে যায় তাদের। ব্যাংককের বাজারে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনলাইন ব্যবসায় আগ্রহ গড়ে তুলে শুরু করেন অঙ্কিতি। বেঙ্গালুরুতে বসে প্রযুক্তিগত দিকটা সামলাতে শুরু করেন ধ্রুব। দক্ষিণ এশিয়ার বাজার দখল করতেই আগ্রহী ছিলেন তারা।

সে অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। গত চারবছরে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, চীন, কোরিয়া এবং কম্বোডিয়ার বাজার দখল করতে সফল হয়েছে জিলিঙ্গো। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াতেও লেনদেন শুরু হয়েছে।

একসময় যে সেকোয়া সংস্থার কর্মী ছিলেন অঙ্কিতি, আজ তারাও জিলিঙ্গোয় ২২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগ রয়েছে সিঙ্গাপুরের তামসেক হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেডের। এই মুহূর্তে জিলিঙ্গোর সিইও অঙ্কিতি। সিঙ্গাপুরে সংস্থার সদর দপ্তর সামলান তিনি। বেঙ্গালুরুতে একশ জন কর্মীর নেতৃত্ব দেন ধ্রুব। তিনি সংস্থার প্রযুক্তিগত প্রধান (সিটিও)।

আন্তর্জাতিক