অ্যামোবিয়াসিসে আক্রান্ত হয়ে ভেনেজুয়েলার চলতি সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৪টি শিশু। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিরাপদ খাবার স্বল্পতা ও চিকিৎসাকর্মীর অভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে আরও অনেক শিশু।
৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় শহর বার্সেলোনার লুইস রাজেট্টি হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছে, অ্যামিবায়োসিসে প্রাণ হারিয়েছে ১৪ শিশু। এটি একধরণের দূষিত খাবার ও পানিবাহিত কলেরা।
হাসপাতালের এক কর্মী হোসে প্লেনস বলেন, তিন বছর আগে আমাদের এখানে অ্যালকোহল ও গজের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত সিরিঞ্জ বা সিরাম নেই।
এক অসুস্থ শিশুর মা লেডি চ্যাকন বলেন, আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। অল্পের জন্য সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়নি। আমাদের কিছুই নেই। আমরা চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছি, কিন্তু এখানেও আমাদের কিছুই নেই।
তিনি বলেন, আমি এই সরকারের তাৎক্ষণিক পতন চাই, এই সরকার আমদের ধ্বংস করেছে।
অপর এক নারী মারলিয়া ম্যারিনো চলতি সপ্তাহে তার দুই মাস বয়সী শিশু সন্তানকে অ্যামিবায়োসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার সন্তানের মৃতদেহ এখনো হাসপাতালেই পড়ে রয়েছে। কারণ, তার কাছে একটি কফিন কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই।
তিনি বলেন, এখানে কিছুই নেই। তাদের কাছে কোনো ওষুধ নেই, খাবার নেই। আর এখন আমার ছেলেটিও মরে গেছে।
আমরা ভিক্ষুক নই
এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খাদ্য সংকট ও সরবরাহে ঘাটতির কথা দাবি করলেও, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দেশটিতে কোনো মানবিক সংকট চলছে না বলে জানিয়েছেন। যদিও সম্প্রতি তিনি দেশটির স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মাদুরো বলেছেন, ভেনেজুয়েলার স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যত ওষুধ লাগে তার সবগুলো দেশেই উৎপাদন করা হবে। আমরা সবাইকেই সাহায্য করতে পারবো, সমাজতন্ত্রে যেমনটা হওয়া উচিৎ।
বৃহস্পতিবার মাদুরো দেশটিতে মার্কিন ত্রাণবাহী একাধিক গাড়িকে প্রবেশাধিকার দেননি। গাড়িগুলো বর্তমানে ভেনেজুয়েলা সংলগ্ন কলম্বিয়া সীমান্তে অবস্থান করছে।
মাদুরো ত্রাণবাহী গাড়িগুলোকে দেশটিকে অপমান করার ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, আমরা ভিক্ষুক নই।
ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনী ঘিরে নতুন ছক যুক্তরাষ্ট্রের
ওদিকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে আরও চাপে ফেলতে ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীকে হাতে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যেই মাদুরোর পক্ষ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে লাতিন আমেরিকান এ দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, মাদুরোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে দেশের সামরিক বাহিনীকে এবার দূরে সরানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে মাদুরোবিরোধী আন্দোলন আরও বেগ পাবে। তবে এখনও মাত্র কয়েকজন সামরিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দেশটির। এর প্রতিক্রিয়া কি এসেছে, তা-ও নিশ্চিত নয়।
নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিতে যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে চাপ দিচ্ছে শুরু থেকেই। এ নিয়ে সাম্প্রতিককালে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল ভেনেজুয়েলা। দেশটির জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুয়াইদো তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২৩ জানুয়ারি নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টও’ ঘোষণা দিয়ে দেন গুয়াইদো।
এছাড়া তাকে স্বীকৃতিও দিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ অন্তত ১২টি দেশ। আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও এর বেশ কিছু মিত্র একই স্বীকৃতি দেয় গুয়াইদোকে। যদিও রাশিয়া, চীনসহ কিছু দেশ এবং সেনাবাহিনী এখনও পর্যন্ত মাদুরোর পাশেই রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোকে আরও চাপে ফেলতে চায় এ সরকার পতনে। সেজন্য মাদুরোর পক্ষে থাকা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা বলছেন, গুয়াইদো কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সমর্থন পেয়েছেন। তবে নেতৃত্ব এখনও মাদুরোর পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা- ভেনেজুয়েলা সেনাবাহিনীর সদস্যরা একে একে মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, খুব সীমিত সংখ্যক সেনা সদস্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে কি আলোচনা হচ্ছে, বা ফলাফল কী আসছে, এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানি তিনি।