গ্রামীণ ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতায় আনার জন্য সুপারিশ প্রণয়নসহ এর কার্যক্রম পর্যালোচনায় সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিশনকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধির আওতায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং আগামীতে এগুলোর জন্য করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ প্রণয়নে বুধবার চার সদস্যের এ কমিশন গঠন করে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬-এর আওতায় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
গঠিত এ কমিশনকে ‘গ্রামীণ ব্যাংক অফিস স্পেস, জনবল ও যাতায়াতসহ যাবতীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে’ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিশন আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
চার সদস্য বিশিষ্ট এ কমিশনের সভাপতি হচ্ছেনÑ প্রাক্তন সচিব মামুনুর রশিদ এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক ড. এমএ কামালকে। অপর দু’জন সদস্য হলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের গঠন ও কি সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা চিহ্নিত করবে কমিশন।
এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এর প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, দুর্বলতা, সমস্যা ও বাধাগুলো চিহ্নিত করা, গ্রামীণ ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিতকরণে বিশেষত এর ব্যবস্থাপনার জবাবদিহিতা এবং পরিচালনাগত স্বচ্ছতার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো, কোম্পানি ও উদ্যোগগুলোর উদ্দেশ্য, আইনি অবস্থা ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে কমিশন।
অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কার্যপরিধিতে।
এগুলো হচ্ছে, কবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে, কেন এগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং যে উদ্দেশ্যে এদের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা পূরণ হয়েছে কি না?
দ্বিতীয়ত, আইনগত বা অন্য কিভাবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত?
তৃতীয়ত, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স¤পর্ক চিহ্নিত করা।
চতুর্থত, গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণে এরা কিভাবে অবদান রাখছে?
পঞ্চমত, প্রতিষ্ঠানগুলোর সাংগঠনিক, ব্যবস্থাপনাগত ও আর্থিক কাঠামো চিহ্নিতকরণ এবং ষষ্ঠত, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এদের উত্তরসূরী নির্বাচনের বিধিমালা খুঁজে বের করা।
পর্যালোচনার ক্ষেত্রে উপরোল্লোখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক সুনির্দিষ্ট করতে একটি স্কিমের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে কমিশন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক, এদের ঋণগ্রহীতা/মালিকরা কিভাবে লাভবান হয়েছেন তা এ স্কিমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে ব্যবস্থাপনা ও মালিকানার উত্তরসুরী নির্বাচনের বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে পারে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে স্কিমকে। সেই সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বর্পূণ বিষয় হচ্ছে সামাজিক বিনিয়োগের প্রকল্পগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এ স্কিম নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।