চীনের ঋণের জালে জড়িয়ে সমুদ্রবন্দর হারাতে চলেছে কেনিয়া। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছরের মধ্যে কেনিয়াকে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে দেশটির প্রধান সমুদ্রবন্দর মমবাসা পোর্টের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। আর এ বছরের জুনেই চীনের দেওয়া পাঁচ বছরের ‘গ্রেস টাইম’ শেষ হয়ে যাবে। ফলে জুলাই থেকে কেনিয়াকে প্রতি বছর আগের তুলনায় তিন গুণ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
কেনিয়ার একটি অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংক মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ ঋণ দিতে রাজি হলে ২০১৪ সালের ১১ মার্চ দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। দেশটির রাজধানী নাইরোবি থেকে মমবাসা পর্যন্ত সরাসরি রেলযোগাযোগের জন্যে স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে (এসজিআর) নির্মাণে কেনিয়া সরকার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। পরে ২০১১ সালে নাইরোবি-মমবাসা রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি স্বাধীনতার পর কেনিয়ায় সবচেয়ে বৃহৎ ও ব্যয়বহুল অবকাঠামো নির্মাণ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ওই ঋণচুক্তি সম্পাদনের জন্যে কেনিয়া নিজেদের সম্পদ রক্ষার সার্বভৌম ক্ষমতা ত্যাগ করেছিল। ফলে চীনের বেঁধে দেয়া আইন অনুযায়ী চুক্তি পরিচালিত। চুক্তির পর কেনিয়া সরকারের নিজেদের সম্পদ রক্ষার কোনো অধিকার নেই।
এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্র ফাঁস হয়েছে। তাতে দেখা যায়, চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে কেনিয়া প্রায় ২০০ কোটি ইউরো ঋণ নিয়েছে। এই অর্থ কেনিয়ার ন্যাশনাল রেলওয়ে কর্পোরেশন সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে চীন সরকার দেশটির মমবাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। কেনিয়ার সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক বন্দর এটি।
এর আগে শ্রীলঙ্কা গভীর সমুদ্র বন্দর হাম্বানতোতা নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিতে বলা হয়, বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে শ্রীলঙ্কা ১১০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে। হাম্বানতোতা বন্দরটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগে বন্দরটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই বন্দরটি চীন ও ইউরোপের বন্দর ও সড়ককে সংযুক্ত করবে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ অবসান হওয়ার পর থেকে দেশটিতে কয়েক শ কোটি ডলার অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে চীন।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের কেনেথ কউণ্ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয় চীন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় চীন এমন এটি নিয়ে নেয়।