‘তারকারা বিয়ে করবেন লুকিয়ে। এ ধারণাটা কি বিশ্বাস করেন আপনি?’ প্রশ্ন শুনেই মুচকি হাসেন মেহ্জাবীন। ‘নাহ। বিয়ে জীবনের বড় একটা ধাপ অতিক্রম করার মতো। এটা আয়োজন করে সবাইকে জানিয়ে, সবার দোয়া নিয়ে তবেই শুরু করতে হয়।’
ফেসবুকে কদিন আগে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও যাঁকে ঘিরে এমন গুঞ্জন, তাঁকে নিয়ে একটি ছবি দেখা গেছে মেহ্জাবীনের। সবাই বসে আছেন একটি মিলাদ মাহফিলে! ইনস্টাগ্রামে হাতভর্তি মেহেদির ছবি। এসেছে মেহ্জাবীনের বউ সাজার ছবিও। এত কিছুর রহস্য কী? আমরা সরাসরি এসব প্রশ্নে যাই না। বিব্রত হতে পারেন। করতে পারেন রাগও। তাই খুব সাবধানে মেহ্জাবীনের মুখোমুখি বসতে হয়।
গত রোববার আমাদের কথা হচ্ছিল উত্তরার একটা শুটিং বাড়িতে বসে। প্রচণ্ড ব্যস্ততা ছিল মেহ্জাবীনের। মেকআপ রুমে বসে সহশিল্পী আফরান নিশোর সঙ্গে পরের দৃশ্যর সংলাপ আওড়াচ্ছিলেন। নবদম্পতিদের খুনসুটিভরা সংলাপ। আমাদের দেখে তাতে ছেদ পড়ল। কুশল বিনিময়ের এক ফাঁকে ঢুকলেন সহকারী পরিচালক। এসেই পরের দৃশ্যের তাগাদা। সেদিন ওই নাটকের শুটিংয়ের শেষ দিন। রাত নয়টা বেজে গেছে। এখনো কয়েকটি দৃশ্য বাকি। তাই এই তোড়জোড়। দৃশ্যটি করে এলেন মেহ্জাবীন ও নিশো। পরের দৃশ্যের প্রস্তুতির ফাঁকেই কথা শেষ করতে হবে। তবে তীব্র কুয়াশার মধ্যে একচিলতে রোদের মতো সুখবর এল—পরের দৃশ্যটা শুধু আফরান নিশোর।
মানুষের মুখ, মানুষের কথা
বিয়ের প্রসঙ্গ আসায় মিটিমিটি হাসেন মেহ্জাবীন। এ হাসির রহস্য কী বোঝা কঠিন। ‘আমি ঠিক জানি না সবাই আমাকে এ প্রশ্ন কেন করছেন। আমি সবার কাছ থেকে অনবরত অভিনন্দন পেয়েই যাচ্ছি। জানেন, এ ঘটনায় আমি খুবই অবাক এবং বিব্রত হচ্ছি।’ একনাগাড়ে বলে থামেন। এবার সরাসরি বলি, আপনার বিয়ে নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আসল রহস্য কী? মেহ্জাবীন চালাক—এটা প্রমাণিত হয়েছে অনেকবার। আরও একবার হয় এই প্রশ্নের উত্তরে। বলেন, ‘আপনার প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর দেওয়া আছে। এটা নিতান্তই গুঞ্জন। ওই যে বললাম, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। কয়েকটি পত্রিকা তো সংবাদই ছাপিয়েছে।’
কথা থামান না তিনি। মেহ্জাবীনকে যেন আজ কথায় পেয়েছে। ‘বিয়ে যখন হবে, তখন তো সবাই জানবেই। আয়োজন যত ছোট হোক, গোপনে তো করব না। অন্তত কাছের মানুষ এবং সাংবাদিকদের জানাব। দাওয়াত না দিলেও বলব, আমি বিয়ে করছি, কিন্তু এখন আমন্ত্রণ জানাতে পারছি না। পরে বড় আয়োজন করে সবাইকে নিয়ে উৎসব করব। কিন্তু লুকাব কেন?’
তাঁর মানে পরিষ্কার যে আপনি বিয়ে করেননি?
মেহ্জাবীন
মেহ্জাবীন
‘প্রশ্নই আসে না। আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছিই না। ২০২২-২৩ সালের আগে বিয়ের কথা মুখে আনা বারণ।’ সোজাসাপটা বলে দেন। সঙ্গে যোগ করেন, ‘অনেকে অনেক কিছু বলেন, কিন্তু সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ, এত কিছু ভাবলে আমি কাজে মনোযোগ দিতে পারব না।’
তবে কি প্রেম?
‘তাহলে আমরা নিশ্চিত হলাম আপনি বিয়ে করেননি।’ হেসে ওঠেন। বলেন, ‘কোনো সন্দেহ আছে? আমার বিয়ের কোনো ছবি, কোনো ঘটনা কেউ কি কিছু বলতে পারবে? যদি হুট করে হয়ে যায়, তবুও তো কিছু মানুষকে জানাতেই হবে। তাই না? আর এই সময়ে কি লুকিয়ে রাখা সম্ভব?’
তবে কি প্রেমে আছেন মেহ্জাবীন? বিনা বাক্য ব্যয়ে বললেন,‘ না, একদম সিঙ্গেল আমি।’ কিন্তু একজন নির্মাতার সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায় যে। সেসব কী মিথ্যা? এবার নড়েচড়ে বসেন তিনি। বলেন, ‘নাহ, সেসব গুঞ্জন থাকুক কিছু। একসময় সবাই সবকিছু জানবেন।’ তবে যত গুঞ্জনই থাকুক, মেহ্জাবীন জানালেন, বিয়েটা বাবা-মায়ের পছন্দেই করতে চান। ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য আপাতত এতটুকুই জানিয়ে রাখলেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বললেন, ‘দর্শকের সঙ্গে যদি কাউকে পরিচয় করিয়েই দিতে হয়, তাহলে সেটা স্বামী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেব। আমার মনে হয়, এটাই হবে তাঁর জন্য সর্বোচ্চ সম্মান। একই সঙ্গে তিনি যখন আমাকে কারও সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন, সেটা যেন স্ত্রীর পরিচয়েই দেন। এটাই হবে আমাদের সম্পর্কের সেরা পরিণতি।’
ছবি রহস্য
এবার কয়েকটি ছবির রহস্য খোলাসা করে দিলেন মেহ্জাবীন। যে ছবিগুলো নিয়েই গুঞ্জন, আলোচনা, সমালোচনা ও অভিনন্দন। প্রথমে বললেন, মেহেদি রাঙা হাতের ছবিটি নিয়ে। এটি মিজানুর আরিয়ান পরিচালিত ভালো থেকো তুমিও নাটকের একটি ছবি। কিন্তু শুধু হাতভরা মেহেদির ছবিটি ইনস্টাগ্রামে দেওয়ায় রহস্য দানা বাঁধেনি। জানতে চাই, বউ সাজের ছবিটি নিয়েও। ‘এ রকম তো হরহামেশাই সাজতে হয় নাটকে। এটা তারই একটি।’ কিন্তু কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে, যাকে ঘিরে গুঞ্জন, তিনিসহ খুব কাছের কিছু মানুষ ও আপনি মোনাজাত ধরেছেন। মনে হচ্ছে একটা শুভ কাজ ঘটতে যাচ্ছে।
এবার খিলখিলিয়ে হাসেন মেহ্জাবীন। ‘আর এতেই সবাই ধারণা করল বিয়ে করেছি? এই ছবিটা আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে মেহভীনের জন্মদিনের। ওর প্রথম জন্মদিনে বাসায় মিলাদ দেওয়া হয়েছিল। তখন খুব কাছের মানুষজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই সময় কেউ ছবিটি তুলে মজা করে আপলোড করেছে। আসলে পেছনের গল্প না জানলে মানুষ অনেক কিছুই মনে করে, এটাই বুঝলাম।’
সেই অনেক কিছুকে এখন খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। কারণ, কাজে ডুবে থাকা এই মেয়েটিকে আপাতত কাজের সঙ্গে যাবতীয় প্রেম করতে হয়। বেশির ভাগ নাটকে তিনি প্রেমিকা বা সদ্য বিয়ে হওয়া কারও স্ত্রী। কে জানে আগামীর প্রস্তুতি এখনই হয়ে উঠছে কি না।
মেহ্জাবীনের স্বামীর যে পাঁচ গুণ থাকা জরুরি
● ক্রিয়েটিভ মাইন্ডের হতে হবে।
● অনেক চার্মিং হতে হবে।
● সৎ হতে হবে।
● আমাকে বুঝতে হবে।
● আমি একজন মানুষের এক্সক্লুসিভিটি পছন্দ করি। কোনো না কোনো ব্যাপারে তাঁর এটা থাকতে হবে।